এই পোস্টটা ১৯শে সেপ্টেম্বর, ২০১৭ সালে ডেইলি স্টারে প্রকাশিত একটি ইংরেজি প্রতিবেদনের বাংলা অনুবাদ।
https://www.thedailystar.net/lifestyle/musings/visit-the-mens-salon-1464040
সোর্স : The Daily Star ধানমন্ডি রোড #২৮ বিএফসি ভবনের দ্বিতীয় তলায় একটি সেলুনে ঢোকাটা আবেগজনিত কাজ থেকেও বেশি ছিল, যার পেছনে ছিল বন্ধুদের উৎসাহ এবং এপ্রিলের উত্তপ্ত দিনে মাইগ্রেনের ব্যথার প্ররোচনা। আমি ভার্সিটির এক বান্ধবীকে ফোন করেছি, এটা জেনে যে সেও একটা মেন’স সেলুন থেকে চুল কাটিয়েছিল এবং সে ধানমন্ডিতে থাকত, তাই এটা তার বাসার কাছাকাছিই হবে। আসলে ছিলও।
আমার ঠান্ডা মালবেরি স্মুদিতে চুমুক দিতে দিতে আমি রোড #২৭ থেকে সেলুনে অভিমুখে হাঁটলাম। গরমে রিকশা নেয়াটাই ভাল হত, তবে ট্রাফিক উত্তাপের চেয়েও খারাপ ছিল। ভেতরে ঢুকতেই এসির শীতলতা আমাকে প্রথমে ধাক্কা দিল। এটি কোনও রাস্তার পাশের সেলুন ছিল না এবং এটি ছিল কোনো পুরুষের সেলুনে আমার প্রথমবারের অভিজ্ঞতা, আমি খরচ নিয়ে বিহ্বল ছিলাম কারণ বন্ধুদের কাছ থেকে গল্প শুনেছি যারা চুল কাটতে প্রায় ৬০০ টাকা চুকিয়েছিল, যখন নিয়মিত রেট ছিল প্রায় টাকা ৮০ থেকে ১০০ টাকা।
তদুপরি, আমি একটি লম্বা চুলের মেয়ে; তারা যদি আমাকে আরও চার্জ করবার সিদ্ধান্ত নেয়? এই চিন্তাগুলি আমার মনের মধ্যে চলার সাথে সাথে আমি সেলুনে সাঁটা একটি চিত্রকে রেফারেন্স হিসাবে ধরে জিজ্ঞাসা করি এর জন্য কত টাকা লাগবে। আমাকে স্বস্তি ও চমকে দিয়ে বলা হলো দাম পড়বে মাত্র দেড়শ টাকা I আমার ১৪ বছরে পা দেবার পর থেকে আমার চুল কাটাবার সর্বনিম্ন ব্যয় ছিল ৫০০ টাকা।
খুব আনন্দের সঙ্গে আমি হেয়ার প্রোডাক্ট ও শেভিং ক্রিমের গন্ধ নিতে নিতে বসে পড়ি। একটি ট্রিমারের গোঁ গোঁ শব্দ যা একটি ক্রিকেট ম্যাচের ভাষ্যকে ছাপিয়ে দিচ্ছিল। আমি শুনতে পেতাম এবং আমি হেয়ারস্টাইলিস্টদের এবং ক্যাশিয়ারদের জানাই যে আমি প্রথম মেন'স সেলুনে এসেছি ও তাই তারা আমার বন্ধুদের আমার আশেপাশে বসতে দেয়, বেশ কিছুটা ব্যস্ত এবং কোলাহলময় পার্লারদের থেকে আলাদা যেখানে কারো নাক ফোঁড়ানো বা নার্ভাসভাবে তাদের চুল কাটা বা আই-ব্রো প্লাকিংয়ের যন্ত্রণা সহ্য করবার সময় সঙ্গ দেবার জন্য কারও পক্ষে অপেক্ষা করার বা দাঁড়াবার মত পর্যাপ্ত জায়গা কখনো ছিল না।
সেদিনের জন্য আমার হেয়ারস্টাইলিস্টকে ধৈর্য ধরে আমি তাকে আমার ছবিগুলি দেখিয়েছিলাম এবং সে আমাকে মনোযোগ দিয়ে শুনেছিল যখন আমি ব্যাখ্যা করেছি যে আমি চুল ছোট করার বিষয়ে কোনো সংশয় নেই, তাই তার অবশ্যই এটি বেশ ছোট করা উচিত, এ সম্বন্ধে আলাদাভাবে উল্লেখ করতে আমার বন্ধুরা আমাকে পরামর্শ দিয়েছিল অন্যথায় তারা পুরুষদের তুলনায় মহিলাদের চুল কিছুটা ভিন্ন ধাঁচে কাটে।
তারপরে তিনি শুরু করলেন, প্রথমে আমার ঘাড়ে কালো কাপড়টি সঠিকভাবে ফিট করে যা আমাকে আমার গোড়ালি পর্যন্ত ঢেকে রেখেছিল এবং আমার ঘাড় একটি কাগুজে তোয়ালে দিয়ে আবৃত করে দেন। দেখে মনে হচ্ছিল যে পুরোহিতরা পরেন এমন এক নামাবলীর মতো।
তিনি আমার চুলগুলি একটু একটু করে কাটছিলেন, যাতে আমার বন্ধুরা ক্যামেরার মাধ্যমে এই পরিবর্তনটির স্মৃতি সংরক্ষণ করতে পারে এবং ইতিমধ্যে আমি নিজেকে বদলাতে দেখি। আমি কিছুটা শরীর ছেড়ে বসলাম যখন স্টাইলিস্ট প্রথমে ডানে, এরপরে বামে ও তারপরে উপরে এবং পিছনটা কাটছিল ফেলতে পেরে , তা নিশ্চিত করার জন্য যে চুলের দৈর্ঘ্য চারদিকে একই থাকে।
আয়নাতে আমি আরো দু'জন লোককে দেখতে পেলাম, একজন তার চুল ও দাঁড়ি কাটা হয়ে যাওয়ার পরে ম্যাসেজ করছিল এবং অপর একজন ব্যক্তি তার চুল ছাঁটাইয়ের দৈর্ঘ্য নির্দেশ করছিলেন। আমি উজ্জ্বল সাদা লাইটের আলোয় এ সমস্ত দৃশ্য দেখছিলাম যা সেলুনের ভেতরটাকে একটি নীলাভ চেহারা দেয়, যা পার্লারগুলির আলোকসজ্জার একেবারে বিপরীত যেথায় উষ্ণ এবং ঈষৎ নিঃস্পন্দ হয়।
আমার স্টাইলিস্ট চুল কাটা শেষ করার পরে একটি ছোট ছেলেকে পাউডার কেস আনতে বললেন এবং আমি বুঝে উঠবার আগে তিনি চুলের ছোট ছোট কণাগুলি মুছতে সাদা বুরুশযুক্ত একটি মোটা প্রশস্ত ব্রাশ ব্যবহার করেছিল, যা আমার মুখমণ্ডলের ওপর পড়েছিল এবং আমার নাকে সুড়সুড়ি দিচ্ছিল। তিনি চুল গজানোর প্রান্তদেশে সুগন্ধি ট্যালকম পাউডার লাগালেন এবং মিনিটের মধ্যে আমার চুল কাটা সম্পূর্ণ হয়ে যায়।
ফিনিশিং টাচ বাকি ছিল — আমার চুল সেট করা এবং এর বেশিরভাগই উষ্কখুষ্ক ছিল এবং তিনি যখন আমার মাথার ত্বক ম্যাসাজ করেছিলেন এবং আমার চুলের গোড়া মুঠ করে করে হাল্কা টানলেন, আমি নিজেকে নিদ্রালু অনুভব করি!
চুল কাটার জন্য তাদের অর্থ প্রদান এবং ধন্যবাদ দেওয়ার পরে আমি দুটি জিনিস লক্ষ্য করলাম, যে আমার একই সঙ্গে চুলগুলো এখনও জায়গামত আছে এমন অনুভূতি হচ্ছিল সেই সাথে আমি আমার কাঁধে এবং ঘাড়ের পিছনে যেমন স্নিগ্ধ বাতাস অনুভব করতে পারি যেমনটা আমি আগে কখনও অনুভব করিনি যতদূর আমার মনে পড়ছে।
বড় হওয়ার পরে এই প্রথম আমি পুরুষদের সেলুনে চুল কাটতে পেরেছিলাম। আমাকে এ যাবৎকাল শেখানো হয়েছিল যে মহিলারা পার্লারে যাবে এবং পুরুষরা সেলুনে।
ছোটবেলায় আমি সবসময় ডিপার্টমেন্টাল স্টোরের নিকটে নাপিতের দোকানে যেতাম গলির শেষে যেখানে আমাদের বাড়ি ছিল এবং আমার মা আমায় সঙ্গ দিতেন এবং তিনি আমাকে একটি মিমি চকলেট বা কিছু পটেটো ক্র্যাকার্স কিনে দিতেন আমার চুল কাটার হ্যাপা ভোলানোর জন্য।
যখন আমি কিছুটা বড় হলাম 'মহিলা হওয়ার' আদর্শের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে আমার চুলগুলি আরেকটু লম্বা রাখতে হয়েছিল। তখন আমার চুল ঘরে কাটা হতো, সমস্তটা জৌলুসহীন কাপড়, ধারালো কাঁচি ও ঘন দাঁতের চিরুনি এবং আমার মায়ের নিজস্ব দক্ষতার ওপর ভর করে; শেষ পর্যন্ত আমাকে পার্লারে যাওয়ার অনুমতি দেওয়া হয়েছিল যখন আমাকে যথেষ্ট বয়ঃপ্রাপ্ত বলে বিবেচনা করা হয়। আমি এখনও এগুলো মনে করে বোকার মত হাসি, যখন আমি পুরুষদের সেলুনে যাই, সাধারণ তবু কৌশলী হেয়ারকাট এবং বিনামূল্যে ম্যাসেজের প্রেমে।
লিখেছেন : আয়েশা রহমান চৌধুরী