Wednesday, June 24, 2020

চুলের জন্য ভালোবাসা

দাদুর গ্রামে বেড়াতে এসেছি আমার দাদুর প্রায় ১০০ বছরের পুরানো বাংলো দেখার জন্য। সেখানে আমার পরদাদার বড় ভাই (আমারও পরদাদা) এর পার্সোনাল রুমে ঢুকলাম।
সেখানে কিছু জিনিস পত্র পেলাম যেগুলার মধ্যে আমার চোখ গেলো একটা সিন্দুকের দিকে।

সেই সিন্দুকের ভিতর দেখলাম প্রায় সাড়ে ৫ ফুট লম্বা খুব মোটা চুলের বেণী। খুব সুন্দর চুলের কালার, শাইনি আর ধরে এত কোমল লাগছিল মন চাচ্ছিল ধরে চুমু খাই, মুখের সাথে ধরি আর চুলের গন্ধ নিই।

কিন্তু তা করলাম না কারন সিন্দুকে প্রচুর ময়লা জমে ছিল মনে হয় ১০০ বছর ধরে পরিষ্কার করা হয়নি কিন্তু চুলের বেণীটা পরিষ্কারের পর দেখা গেল ১০০ বছরেও তার ঔজ্জ্বল্য, লাবণ্য একটুও ক্ষয় হয়নি।

আর পেলাম একটা ডায়রি আমার পরদাদার। এখানে হয়ত থাকতে পারে এই বেণীর রহস্য। যাক পরিষ্কার করে পড়া শুরু করলাম যেভাবে লেখা…

২৪ জানুয়ারি, ১৯১৬
আমার নাম সুব্রত গুহ বয়স ৩০। আমি এখন কোলকাতায় খুব ভাল একটা চাকরি (তখনকার ইংরেজ আমলে) করি তাই মা বাবা তোড়জোড় করছে বিয়ে করাতে।
সাহেবদের সাথে কাজ করার সুবাদে আমি যেকোন যুবতীকে বিয়ের প্রস্তাব দিতে পারি তবে আমার অনেক দিনের স্বপ্ন এক বিধবাকে বিয়ে করব। বিধবার হারানো সংসার ফিরিয়ে দিব।

কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে বিধবা সম্বন্ধ পাওয়াও দুষ্কর হয়ে দাড়িয়েছে। মা দাদা-বৌদিরা বলছে এ জেদ বাদ দিতে। কিন্তু আমি ধৈর্য ধরে অপেক্ষা করলাম আর অবশেষে পাওয়াও গেল।

২৮ বছরের মহিলা তার প্রায় ১১ বছরের ছেলেও আছে। মহিলা গায়ের রঙ তামাটে, কিছুটা স্থূল গড়ন, চেহারাও মায়াহীন কেমন যেন রাগী রাগী ভাব। তবে একটা জিনিস আমার চোখে পড়লো তার অনেক বড় খোঁপা। পুরো মাথা শাড়ির আচলে ঢাকা কিন্তু দেখে বুঝা যাচ্ছিল খোঁপা খুব বড়।

মহিলার নাকি দ্বিতীয় বিয়েতে একেবারেই ইচ্ছে নেই কিন্তু পরিবার জোর করছে খুব। ইনি তার স্বামীকে খুব ভালবাসতেন তার মৃত স্বামীকে ছাড়া আর কাউকে তার জায়গায় আসতে দিবেন না।

২০ আগস্ট, ১৯১৬
যাক বিয়ের পর আজ আমাদের ফুলশয্যা। তবে আমার সদ‍্যবিবাহিত স্ত্রী এতে রাজি নন তিনি নাকি আলাদা ঘরে একা ঘুমাবেন।
তার ঘরে গেলাম দেখি তাকে খোলা চুলে। প্রায় হাঁটুর নিচ পর্যন্ত এত সুন্দর চুল কখনো কল্পনাও করতে পারিনি। পাহাড়ি ঝর্ণার মত এত সুন্দর ভাবে ঢেউ খেলানো, এত ঘন ঝলমলে।
সে হঠাৎ আমায় দেখে ঘাবড়ে গেল। দেয়ালে তার হাঁটু অব্দি রেশমি চুলের পিঠ ঠেকালো যেন আমি দেখতে না পাই। তার সামনের চুলগুলো কেনো জানি এমন ভাবে বাকানো তার চেহারাটা অপরূপা লাগছে।
সে প্রতিনিয়ত মুখমণ্ডল থেকে চুল সরাচ্ছে আর রাগে লাল হয়ে বলছে “বের হন তাড়াতাড়ি এই ঘর থেকে নাহলে কিন্তু আমি লোকজন ডাকব, এক্ষুনি যান আমি আপনার কোন ক্ষতি করে ফেলব, শেষে একটা কাঁচের গেলাস ভেঙ্গে নিজের গলায় ধরে বলে নিজেকে শেষ করে ফেলব।"

সে এত রাগছে আর গালিগালাজ করছে তবুও তার সামনের চুলের জন্য তাকে এত সুন্দরী লাগছে যে মন চাচ্ছে জড়িয়ে ধরে চুমু খাই কিন্তু সে বিরক্ত হচ্ছে ভেবে চলে আসলাম।
রুম থেকে বের হওয়ার সাথে সাথে দ্রাম করে দরজা লাগিয়ে দিলো। আজ বুঝতে পারছি নারীর আসল সৌন্দর্য তার চুলে। না হলে যেই মহিলাকে দেখতে আহামরি সুন্দর না তাকে আজ খোলা চুলে দেখে আমি অদ্ভুত আকর্ষণ অনুভব করছি।

২১ আগস্ট,১৯১৬
সেদিনের কথা আর ভুলতে পারছিনা। তার এত সুন্দর দেখতে পা অব্দি লম্বা ঘন রেশমি খোলা চুল। তার সামনের চুলের জন্য তার চেহারা কিভাবে। কিভাবে চুল খুললেই এক নারির চেহারা পুরো পরিবর্তন হয়ে যায়। কিভাবে চুল খুললেই এক সুদর্শনা অপ্সরা তে পরিনত হয়ে যায়। এমন জাদুকরী চুল তার।
তার ১১ বছরের ছেলের থেকে জানতে পারি তার বাবার খুব প্রিয় ছিল তার মার চুল তাই চুল কাটেনি। কিন্তু তার বাবার মৃত্যুর পর থেকে চুল একেবারেই যত্ন নেয়া বন্ধ করে দিয়েছে। আঁচড়ায়না, তেলও দেয়না। গোসলের সময় মাথা ভেজায় না যেন চুল না ভিজে। খোঁপা খুলতে সচরাচর দেখা যায়না। বিভিন্ন ভাবে অবহেলা করে যেন চুলের লাবণ্য শেষ হয়ে যায় আর কোন পুরুষ যেন তার চুল দেখে পাগল না হয়ে যায়।

আমি তো পাগল হয়ে গেছি। আর প্রায় ১০ বছর ধরে অযত্নের পরও এত সুন্দর চুল ভেবেই আরো পাগল হই। না জানি প্রথম স্বামীর সময় কত লাবণ্যময়ী ছিল তাহার কেশ। তার ছেলেও নাকি তার মায়ের চুলের পাগল। তার মাকে খোলা চুলে দেখলেই চুলে চুমু খায় আর মুখমন্ডলে নিয়ে মাখে। এসব কখনো পুরান লাগেনা তার কাছে।

২৩ সেপ্টেম্বর, ১৯১৯
প্রায় ৩ বছর হয়ে গেলো আজো তার সাথে একটা রাত ও কাটানো হয়নি। সেই প্রথম যে তাকে খোলা চুলে দেখা আর এত বছর ধরে তার চুলের দেখা পাইনা। সব সময় মাথা আচলে ঢেকে রাখে। তার উপর প্রতিনিয়ত নানান খারাপ ব্যবহার করে সবার সাথে। সংসারের সব কাজ হয় আমার মা, বৌদিদের অথবা আমাকে করতে হচ্ছে। কাল তো সে আমার মায়ের গায়ে হাত তুলেছে! কেউ আমার মাকে কিছু বললে আমি সহ্য করতে পারিনা তার উপর গায়ে হাত তুলল! তবুও তার প্রতি আমার ভালবাসা কেন?
সে সেদিন বললো, "যতদিন আমাকে ঘরের বউ করে রাখবেন এসব সহ্য করে যেতে হবে!"

২০ সেপ্টেম্বর,১৯২০
নাহ! আর পারা যাচ্ছেনা। এভাবে আর কতদিন পারা যায়। আমরা গেলাম ডিভোর্স নিতে কোর্টে।
অফিসার বললো অমুক অমুক জায়গায় সাইন করতে এরপর বলল বাইরে গিয়ে অপেক্ষা করতে।

আমরা বসে আছি হঠাৎ হালকা বাতাস আসল; আমার বউ এর কিছু চুল বাতাসে উড়ছিল আর খেলা করছিল। আমার দেখে আবার প্রেম জেগে উঠলো মনে। কিছুক্ষন পর মাথা থেকে শাড়ির আচল সরে গেলো। তার এত সুন্দর খোপা দেখে আমি আবার যেন পাগল হয়ে গেলাম হারানো সেই অতীত অনুভুতিতে।

তার কাছে গিয়ে বললাম “শুনছো, ডিভোর্সটা না নিলে হয়না"। সে কিছুক্ষণ আমতা আমতা করার পর বলল– মাথা থেকে ভূত এখনও যায়নি? আমি বললাম একটু বুঝার চেষ্টা করো আমি তোমার ওই চুলের পাগল! যেদিন থেকে তোমাকে খোলা চুলে দেখেছি। তুমি এখন থেকে যত খুশি আমাদের সাথে খারাপ ব্যবহার করো তবুও আমাকে ছেড়ে চলে যেয়োনা আমি তোমায় ছাড়া বাঁচবো না।

সে কিছুক্ষণ ভাবার পর বলল: চলুন আমার সঙ্গে। আমাকে নিয়ে গেল কলকাতা শহরের বাইরের এক নাপিত বাড়িতে। সেখানে গিয়ে নাপিতবৌ বলে হাঁক পাড়তেই একজন মহিলা বেরিয়ে এসে; আ লো গিন্নিমা বলে গড় করে প্রণাম ঠুকে বলল আহা কদ্দিন পর পায়ের ধুলো দিতে এলেন? নাপিত বৌয়ের মাথায়ও একটা বড় সুন্দর দেখতে খোঁপা। গায়ের রঙ উজ্জ্বল শ্যামলা চিকন গড়ন চেহারা সুন্দর। আমাদের দুজনকে প্রণাম শেষে ঘরের ভিতর থেকে দুটো জলচৌকি এনে আমাদের বসতে বলল। বলল গিন্নিমা-বাবুমশাই আপনারা বসুন। আমি কিছু ফলারের যোগাড়জন্তর করি। কিন্তু আমার স্ত্রী বলেন— বসতে আসিনিরে ক্ষেমী। ক্ষেমী কিছুটা অবাক হয়ে উত্তর দেয়: এতদিন পর আমাদের ভিটায় এলেন একটু বসুন; সেবা করার সুযোগ দিন। আমার স্ত্রী এবার বলল- যে সেবা তোর পেশা তাই নিতে এসেছি। সে এর মানে বুঝল, আমিও বুঝলাম তবু মুখ ফুটে কিছু বললাম না। আমার স্ত্রী আমাকে সরে বসতে বলল আর নাপিতবৌ আমার স্ত্রীর ঘন চুলের থেকে অনেকগুলো চুলের কাঁটা সরিয়ে আর বিশাল সেই খোপাটি থেকে কাঠের চিরুনি সরিয়ে তার চুল খুলল।
তাকে আবার খোলা চুলে দেখে মন চাচ্ছে জড়িয়ে ধরি। আশেপাশে হঠাৎ চোখ পড়লে দেখি কটা ছোট ছোট ছেলেমেয়ে একটু দূরে দাঁড়ানো। সবাই হা করে তার চুলের দিকে তাকিয়ে দেখছে।
–তাহলে এদ্দিন বাদে আপনি চুল কাটবেন। কিন্তু আপনি না আবার বিয়ে কল্লেন। শ্বশুরঘরের নোকে কি বলবে? এত সুন্দর চুল কেটে ফেলবেন। কতটা কাটবেন?
–আমার সব চুল কেটে উনাকে দিয়ে দে।
–কি বলছেন গো গিন্নিমা! সবটা কাটবেন? এমন নির্দয় হলেন কি করে?
–আমি বললাম না সব চুল কেটে ফেলতে। এক বার বললে কানে যায় না? তোকে যা করতে বলি তাই কর।
ক্ষেমী একদৌড়ে ঘরে ঢুকে পিছনের দরজা দিয়ে বেরিয়ে শ‍্যামা নামের আরেকজন মহিলাকে ডাকল। তারা যখন আবার আমাদের সামনে এলো তখন তাদের হাতে একখানা ময়লা চাদর, একজোড়া কাঁচি আর চিরুনি, একখানা ক্ষুর আর আরো কি যেন ছিল।
কিছুক্ষণ রাশি রাশি চুল আঁচড়ে অতঃপর বড় একটা কাঁচি দিয়ে একে একে সব চুল কেটে ফেলতে থাকলো আর আমার মনে হলো আমার হৃদপিণ্ডেও কে যেন ছুরি কাঁচি চালাচ্ছিল। তার ঘন চুলগুলি এমন ভাবে ঢেউ খেলছিল যেন কাঁচির বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ার চেষ্টা করছে। মাথা ভরা চুল ক্ষেমী আর শ‍্যামা পালা করে কাটছিল।

সবশেষে পড়ে রইল এক বিশাল রেশমি ঝলমলে চুলের সমুদ্র। ওরা দুইজনে মিলে সেসব চুল সংগ্রহ করে বেণী বেঁধে আমার হাতে দিলো। কষ্ট ও হচ্ছে আবার এত কোমল চুল হাতে নিতে পেরে মন উতলা লাগছে।

সে এবার আমার দিকে তাকিয়ে বলল:- এখন তো আর কোন ভালবাসা অবশিষ্ট নেই আমার জন্য? এবার দয়া করে আমার জীবন থেকে চলে যান। আমার পাগল করা সেই চুল আপনাকে দিয়ে দিয়েছি। আমি বাকরুদ্ধ হয়ে গেলাম। আজ তাকে চুল কাটানোর পরও কেন যেন মায়াবী অপরূপা লাগছে কিন্তু তাকে আটকানোর কোনো অধিকারই আমার আর নেই। পুরুষের মত ছোট করা চুল সে ঘোমটা তুলে ঢেকে নিলো। আমিও সেই বেণীটা ক্ষেমীদের দেয়া একটা থলেতে পুরে তার পিছু পিছু বেরিয়ে নাপিতবাড়ি থেকে বেরিয়ে এলাম।

ডায়েরিতে এইটুকুই লেখা। এরপর আমি যতদূর জানি পরদাদার বড় ভাই অবিবাহিতই থেকে যান এবং বাকী জীবন তার প্রাক্তন স্ত্রীর চুলের ভালবাসায় কাটিয়ে দেন।

আমি আরেকবার আমার পরদাদীর সেই বেণীর দিকে তাকালাম। প্রায় শত বছর শরীর থেকে আলাদা হয়ে থাকার পরও অর্থাৎ শরীরের পুষ্টি উপাদান না পাওয়ার পর তার উপর এত বছর বদ্ধ ট্রাঙ্কে অযত্নে ময়লার মধ্যে থাকার পর এখনো এত লাবণ্যময়ী সেই চুল। না জানি তার মাথায় থাকলে আর তিনি এতদিন বেঁচে থাকলে কেমন দেখতে লাগত ভেবে আমিও যেন পাগল হয়ে যাই। অবশ্য মনে পড়ল এতদিন বেঁচে থাকলে তিনি বুড়ি হওয়াতে তার এই চুলগুলি সাদা হয়ে যেত নিশ্চয়। ভাল হয়েছে উনি এগুলো কেটে ফেলেছিলেন।

পাগল হয়ে তার সেই মোটা বেণী খুলতেই এত সুন্দর ঝলমলে ঘন মেঘের মত ঢেউ খেলানো চুল দিয়ে যেন পুরো বিছানা ভরে যাওয়ার মত অবস্থা। নিজে আর তর সইতে পারি না পরদাদীর চুলগুলো হাতে নিয়ে সারা শরীরে জড়িয়ে ধরে চুমু খাই। এখনও এত সুগন্ধ। পরে অবশ্য নিজেকে সামলে নিয়ে এগুলো আবার গুছিয়ে যত্ন করে একটা রিবন দিয়ে বেঁধে আমার ব‍্যাগে রাখলাম। এখন এটা আমার সঙ্গে নিয়ে যাব।

[সংগৃহীত ও ঈষৎ পরিমার্জিত]

1 comment:

Unknown said...

মাল ফেলা চুল গ্লপ দাও

গ্রামীণ নাপিত~আনন্দ (শেষার্ধ)

"আহা…ঠিক আছে…" তিনি বললেন যখন আমি তার বাক্সের দিকে অনুসন্ধানের দৃষ্টিতে তাকালাম তার কাছে কোন ধরনের রেজার আছে তা দেখতে। সৌভাগ্যবশত ...