Wednesday, June 24, 2020

ভালোবাসার প্রবঞ্চনায় চুল কেটে ফেলা

আমার নাম রেহনুমা। বয়স ২৪। আজ আমাদের ৩য় বিবাহ বার্ষিকী। 
অবশ্য এবারই প্রথম বিবাহবার্ষিকী পালন করা হচ্ছে। কারন আমার স্বামীর মুড যে হঠাৎ চেঞ্জ হওয়া শুরু করেছে। আমার চুল কাঁধ পর্যন্ত পৌঁছানোর পর থেকেই আমাকে ছাড়া আর কিছু বুঝেনা।
তবে বিয়ের প্রথম প্রথম আমাকে একদমই ভালোবাসতনা। না জানি আগের মত হাঁটুর নিচ অব্দি চুল হলে কি অবস্থা হবে!
হ্যাঁ ঠিক পড়েছেন আমার হাঁটুর নিচ অব্দি চুল ছিল সেই গল্পই আপনাদের উদ্দেশ্যে লিখতে যাচ্ছি।
ছোটবেলায় আমাকে চুল বড় করতে দিতনা। প্রতি মাসেই সেলুনে নিয়ে যেত চুল ছাঁটাতে। মা বলতো রেহনুমার চুল এত দ্রুত বাড়ে প্রতি মাসে সেলুনে নিতে নিতে বিরক্ত হয়ে যাই।
সেলুনের নাপিত আংকেল আমার চুল ছাঁটাতে গেলেই বলত অনেক সিল্কি, শাইনি আর ঘন চুল। বলতো চুল লম্বা রাখলে একদম আকাশের পরীর মত লাগবে! তখনকার সেই ছোট চুলই কেমন জানি ন্যাচারালি রাউন্ড শেপ হয়ে এবং সুন্দর ভাবে কার্ল হয়ে থাকত।
চুল বড় রাখার পারমিশন পাই ক্লাস সিক্সের পর হতে। ক্লাস নাইন-টেনে পড়তে ততদিনে কোমড়ের নিচ পর্যন্ত চুল।
সবাই চুল দেখে বলত এত সুন্দর চুল আমি নিশ্চই কোন পার্লারে গিয়ে এমন চুল বানাইছি। অনেকে ত আবার নকল চুল বলত।
মাথাভরা এত ঘন লম্বা চুল বেধে রাখাও খুব কষ্টকর ছিল কারন চুল এত সিল্কি। আমার মা আমার চুল দেখলেই কেন জানি সহ্য করতে পারতনা। ভাবত আমি পড়ালেখা বাদ দিয়ে নাকি সারাক্ষণ চুল নিয়ে পড়ে থাকি। মা বলতেন– দেখবি একদিন তোর এত চুল সব ঝরে পড়ে যাবে।
আত্মীয়-মেহমান যখন আমার চুলের প্রশংসা করত তখন মা বাবা বলতো আমার চুলের পিছে নাকি অনেক টাকা খরচ হয়। অথচ অনেক টাকা দূরে থাক আমাকে নিয়মিত ২ টাকার শ‍্যাম্পু কিনবার টাকাও দিতনা। তাই গায়ে মাখাবার সাবান দিয়ে কখনো বা কাপড় কাচার সাবান দিয়ে কাজ চালাতে হত। মায়ের উকুনওলা পুরাতন চিরুনি ব‍্যবহার করতে হত।
তবে এত কিছুর পরও আমি আমার নিজের চুল অনেক ভালবাসতাম। কারণ এত সুন্দর স্টাইল হয়ে থাকতো চুল আয়নার সামনে নিজের চুল ছুড়ে মারতাম আর ভাবতাম নিজের ভালবাসার মানুষকে ছোঁয়াচ্ছি।
এত ঘন ছিল বিছানায় ছড়িয়ে রাখলে বিছানার অনেকখানি যায়গা ভরে যেত।
আম্মুর দাঁতভাঙা চিরুনি দিয়ে চুল আচড়ালে অনেক জট লাগতো তাও চুল পড়তনা এত মজবুত চুল।
এত সিল্কি, কোমল, মোলায়েম ছিল যে বারবার খালি মুখমন্ডলে ডলতাম আর চুমু দিতাম। জড়িয়ে ধরে থাকতাম।
যখন ইন্টারে পড়ি ততদিনে হাঁটুর নিচ অব্দি লম্বা হয়েছে। অনেকগুলো ক্লিপ ও কাঠি দিয়ে অনেক কষ্ট করে খোপা বেঁধে স্কার্ফ দিয়ে ঢেকে ক্লাসে যেতাম। কিন্তু খোঁপা অনেক বড় বুঝা যেত।
ক্লাসে বান্ধবীরা চুল খুলতে বললেও খুলতে চাইতাম না। (গার্লস কলেজ সেহেতু ছেলে ছিলনা ক্লাসে তবুও) কিন্তু বান্ধবীদের অনেক আবদারে খোঁপা খোলার পর উন্মুক্ত চুলে আমাকে দেখে সবাই অভিভূত।
আমার কিছু বান্ধবীদের চুলও অনেক সুন্দর কিন্তু তারা বলে আমার চুল নাকি ক্লাসে সবচেয়ে সুন্দর। কেউ কেউ বলল— এত লম্বা চুল দিয়ে কি করবি আমারে তোর থেকে অর্ধেক কেটে দে প্লিজ দোস্ত! পরচুলা বানিয়ে পড়ব।
তখন নকীব নামের এক ছেলেকে ভালবেসে ফেলেছি। কিন্তু বলতে পারতাম না লজ্জায়। আর তাছাড়া আমার চেহারা যেমন তেমন কিন্তু শরীর একটু মোটাসোটা। পরে একবার কয়জন বান্ধবী আমাকে ঠেলে দিয়ে ওর সাথে ধাক্কা দেয়ার মাধ্যমে প্রথম আলাপ হলো।
প্রথম প্রথম ও আমাকে তেমন পাত্তা দিতনা আবার ঐ টাইমে আবার মাছেল নামে আরেক ছেলে আমাকে পছন্দ করত আর আমার ক্লাসমেট বান্ধবীদের বলে আমি নাকি অনেক সুইট দেখতে। আমি ওকে এড়িয়ে যাওয়ায় একবার হাতও কাটছিল, বান্ধবীদের সামনে দুঃখে কেঁদেও ফেলছিল। কিন্তু আমি পাত্তা দিতাম না কিন্তু এখন বুঝি তার এই আবেগ মিথ্যা ছিল না। কিন্তু তখন আমার একমাত্র ভালবাসা ছিল শুধু নকীব।
পরে আস্তে আস্তে রিলেশন হয় নকীবের সঙ্গে। ছবি নিতে চাইত প্রথমে দিতে চাইতাম না। পরে ব্রেক-আপ করবে বলাতে দিতাম। এভাবে ভালই চলছিল।
এরপর কয়েক মাস পর থেকে আমার সাথে হতাত ব্রেক-আপ করতে চাচ্ছে। অনেক রাগারাগি খারাপ ভাষায় গালাগালি। আমার মাঝে কোন দোষ পেল সেটা জানতে চাইলাম; বললাম কি জন্য ব্রেক-আপ করতে চাচ্ছ? লাস্টে অনেক আবোলতাবোল কথা শেষে বলে আমার চুল বেশি লম্বা।
বান্ধবীদের বলাতে তারা বুদ্ধি দিল আমার জন্মদিন সেলিব্রেট করার জন্য কাছেই পার্কে যাব যেখানে নকীব প্রতিদিন সকালে গিয়ে আড্ডা দেয়। সেখানে গিয়ে হিজাব খুলে পরে মাথার সব ক্লিপ আর খোপার কাঠি খুলে আমার চুল নিয়ে খেলা করতে লাগলাম সব বান্ধবীরা দৌড়াদৌড়ি খুনসুটি একজন আরেকজনকে ধাক্কা দিতে থাকলাম।
ছেলে মেয়ে সবাই দেখি হা করে তাকিয়ে আছে। পার্কের বেঞ্চ দখল করা প্রেমিকরা তাদের প্রেমিকাকে ভুলে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। আর বয়স্ক হাওয়া খেতে আসা লোকরা বিরক্তির দৃষ্টিতে দেখছে।
সবচেয়ে ভালো লাগল যখন দেখি নকীবও হাবাগোবার মত তাকিয়ে আছে। আমার কাছে আসলো। আমতা আমতা করে কি জানি বলতে চাচ্ছে। ও বলার জন্য মুখ হা করতেই এক পিস কেক ওর মুখে দিয়ে বললাম কি বলতে চাও বলে ফেল। তুমি তো ব্রেকআপ করতে চাইছিলা।
ও মুখস্থ বলে ফেলল- হ্যাঁ তা তো করবই তোমাকে আর ভালো লাগেনা "
আমিও সঙ্গে সঙ্গে আবেগে বলে ফেলি— প্লিজ আমি তোমাকে অনেক ভালবাসি। সব কিছু ছাড়তে পারব কিন্তু তোমাকে না।
সে বললো ‘সত্যি সবকিছু ছাড়তে পারবে?’ আমি কোনো দ্বিধা না রেখে হ্যাঁ বললাম। –'তাহলে তোমার চুল সব কেটে ফেলতে পারবে?' 


আমি কিছুক্ষণ নীরবে থেকে ভাবার পর বললাম হ্যাঁ পারব। তৎক্ষণাৎ রওনা দিলাম  সেলুনের দিকে। বান্ধবীরা আমার পিছু পিছু আসছিল আর সমানে বলেই যাচ্ছিল ‘‘প্লিজ রে এমন পাগলামি করিস না!"
সেলুনে প্রথমে হেয়ার ওয়াশ করা হল। তারপর রাবার ব্যান্ড দিয়ে ঝুটি বানানো হল কাটার জন্য। অনেক মোটা ঝুটি তাই কাটতে অসুবিধা হচ্ছিল। তাই খোলা চুলেই একে একে চুল কাটছিল আর বাইরে দাঁড়ানো বান্ধবীদের কেউ কেউ কান্না শুরু করে দিয়েছিল।
আমার এত দিনের যত্ন, এতদিনের ভালবাসা সব আস্তে আস্তে মাথা থেকে আলাদা হয়ে ফ্লোরে পড়ছিল ভেবে কষ্টে বুকের ভেতরটা খানখান হয়ে যাচ্ছিল।
চুল সব কাটা হয়ার পর আর কান্না ধরে রাখতে পারিনি। বান্ধবীদের কেউ কেউ আর থাকতে না পেরে পার্লারের ভিতরে এসে আমাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে আরম্ভ করল আর বলল তুই এমনটা কেন করছিস। ওদের কান্না দেখে আমার চোখও বাঁধ মানল না।
এরপর নিজেকে সামলে নিয়ে ওদের সরিয়ে দিয়ে বললাম ইলেক্ট্রিক রেজর দিয়ে চুল ন্যাড়া করতে।
নাপিত নিচে পড়ে থাকা সিল্কি চুলের গোছা কুড়িয়ে আমার হাতে দিল।
আমি আর দেরি করিনি। নিজের শত ভালবাসার চুলগুলো নিয়ে ডাস্টবিনে ফেলে দিতে যাই কিন্তু পারলাম না তাই আমার এক বান্ধবী যে অনেক দিন আগে আমার চুল দিয়ে পরচুলা বানিয়ে পরবার বায়না করেছিল ওকে গিয়ে দিয়ে আসলাম। ও আমার হাত থেকে চুল  নিতে গিয়ে হতবাক হয়ে গেল। এবার আমার আশা ছিল এই স্যাক্রিফাইসের পুরষ্কার হিসাবে আমি নকীবের মন পাব।
পরে যখন নকীবের সাথে একাকী দেখা করে আমি হিজাব খুলে দেখাই নিজের ন্যাড়া মাথা। সে হাসতে হাসতে বলে “এই তো এইবার সেই লাগছে।” আমি জিগ্গেস করলাম ‘এখন থেকে ত তাহলে তুমি আর ব্রেকআপ করবে না।'
সে এবার হাসতে হাসতে বলল– "আমি কখন বললাম চুল কাটলে আমি আর ব্রেকআপ করবনা? আমি শুধু দেখতে চাইছিলাম তুমি আমার জন্য কত কি করতে পারো।”
‘'আর এই ভালবাসার আমার কোন দরকার নাই কারন এমন মেয়ে আমার পিছে আরো পাঁচ ছয়টা ঘুরে। তোমারে দেয়ার মত সময় আমার নাই” এইটা শুনবার পর কান্নায় বুক ভেঙ্গে পড়ে!
পরে জানতে পারি ও এইরকম অনেক মেয়ের সাথেই রিলেশন চালায় আর কয়দিন পর ব্রেকআপ করে ফেলে। এমনকি কারো কারো সঙ্গে ফিজিক্যাল রিলেশন করেছে। আমার শরীরের বাঁক এতটা সুন্দর না সেকারণে ও আমার সঙ্গে ফিজিক্যাল রিলেশনে যেতে চায়নি। এক্ষেত্রে বলা যায় আমি তুলনামূলক ভাগ‍্যবতী।
আমি আর এই কষ্ট ধরে রাখতে পারছিলামনা। আম্মু আব্বুকে তাই বিয়ের সম্বন্ধ খুঁজতে বলে দিই। উনারা ইন্টার পাশের পরপরই বিয়ে ঠিক করে বিয়ে করিয়ে দেয়।
পাত্র বয়স প্রায় আমার দ্বিগুণ, মাথায় টাক। একটা নামীদামী বেসরকারি ব্যাংকের ব্রাঞ্চ ম্যানেজার তাই এই লোভনীয় অফার আর হাতছাড়া হয়নি।

প্রথম প্রথম স্বামী ভালো না বাসলেও যখন থেকে চুল বড় হওয়া শুরু হয়েছে পরিস্থিতি পাল্টে যাচ্ছে।
জানিনা নকীব এখন কি করছে হয়ত আরেক মেয়ের জীবন নিয়ে খেলছে। আমার কোন জানার ইচ্ছা নেই আমি শুধু এই নিষ্ঠুর অতীতকে ভুলে ভবিষ্যৎকে আঁকড়ে ধরে বাচতে চাই। 

[সংগৃহীত ও ঈষৎ পরিমার্জিত]

No comments:

গ্রামীণ নাপিত~আনন্দ (শেষার্ধ)

"আহা…ঠিক আছে…" তিনি বললেন যখন আমি তার বাক্সের দিকে অনুসন্ধানের দৃষ্টিতে তাকালাম তার কাছে কোন ধরনের রেজার আছে তা দেখতে। সৌভাগ্যবশত ...