সায়ন ও মেধা কলেজের তরুণ ছাত্রছাত্রী। দেশব্যাপী লকডাউনের কারণে কলেজটি বন্ধ রয়েছে এবং বেশিরভাগ শিক্ষার্থী বাড়িতে চলে গেছে। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত, কিছু ছাত্র সময়মতো চলে যেতে পারেনি...তারা থেকে গেছে...এখন ছুটি চলছে...তাই কোনো ক্লাস নেই...এই ভয়াবহ পরিস্থিতিতে একটা ছোট কমিউনিটি তৈরি হয়েছে... চলুন শুরু করা যাক
১ম দৃশ্য
সায়ন এবং মেধা মেস হলে দুপুরের খাবারের জন্য দেখা করে। (ইতালিক্সে হল সায়ন, স্বাভাবিক ফন্টে হলো মেধা)
– ওহ হো আবার সেম মেনু, সেই খিচুড়ি, এই নিয়ে ৪ বার হলো এই সপ্তাহে।
– আর বলিস না। এই যা পাচ্ছিস তাই খা।
বাইরে দেখছিস তো কী হাল!
– তা ঠিক কিন্তু এক জিনিস খেয়ে খেয়ে আর ভাল লাগে না। সেই এক রুটিন আর পারছি না।
– যারা আছে তারা এই ছাড়া আর বোধহয় কিছুই আর জানে না… আমারও পেটে চাটা পড়ে যাচ্ছে একই একই খাবার খেতে খেতে।
– আরে শুধু খাবার নয়… রোজ দেখ, ঘুম থেকে উঠে, খেতে আসি… আবার ঘুমাই… উঠে খাই… একটু খেলে, দৌড়িয়ে আবার একটু পরে… খাই আর ঘুম লুকস লাইক রোবট হয়ে যাচ্ছি।
– সিরিয়াসলি এ্যাক্টিভিট ইজ লিমিটেড। মানে আর কি বলব। তুই ওয়েট পুট অন করবি না যা খাবার এদের। বেশি খাওয়া যায় না।
– খেলেই বা কি…থোড়ি এখন কালকে কোনো পার্টিতে যেতে হবে?
– তুই দিতেই পারিস। তোর বার্থডে ট্রিট ডিউ আছে কিন্তু ভুলিস না।
– বার্থডে ট্রিট এখন! দাড়ি কামানোর নাপিত পাওয়া যাচ্ছে না, আর এখন নাকি বার্থডে কেক পাওয়া যাবে? কি যে বলিস?
– হা হা। একদম ঠিক বলেছিস… যা আকাল এলো…মেয়েদেরও মোচ বেরোচ্ছে। 😉 দাড়ি বাড়িয়ে রবীন্দ্রনাথ হয়ে যা।
– দেখ সব মেয়েদের বেরোচ্ছে না। তোর কেন বেরোচ্ছে সে আমি জানি না। 😛
– শাট আপ আমার অত নেই। এমনিতেও করে নেব!!
– কী করবি?
– দেখছি… নিজে থেকে বাবা আমি পারি না… পায়েলকে বলে দেখব।
– তুই কী শেভ করার কথা বলছিস? ফেস শেভ করতে হলে বলিস, আমরা তো প্রায়ই করি। 😜
– পাগল… আই মীন্ট আপার লিপস্টিক! উফফফ!! মেয়েরা নাকি শেভ করবে… অত গাধা না আমি।
– তুই তো বললি…
– আমি বললাম আপার লিপস। নট শেভ রে বাবা!! তুই রবীন্দ্রনাথ হয়ে ঘুরে বেড়া। 😁
– ঠিক আছে, ভুল হয়ে গেছে…
– দাড়ি লম্বা হলে আমি তোকে একটা গার্ডার দেবো…বেঁধে ঘুরিস।
– দাড়িটা সমস্যা নয় রে। চুল তো জঙ্গল হয়ে যাবে মনে হচ্ছে।
– হা হা তা ঠিক দেখ কতদিন চলে, আমাদের ক্যাম্পাসে ঐ এক নাপিত ছিল না? ও নেই?
– ও কাকা প্রথম দিনই হাপিস…বুদ্ধি আছে, এমনি নাপিত থোড়ি হয়েছে।
– ওহঃ! অলরেডি টা টা বাই বাই? তাহলে তো আমার হেয়ার ব্যান্ড নিয়ে নিস। 😉 জানি না ক দিন চলবে এটা! কিছু বলল রে? অলরেডি এত দিন হচ্ছে।
– বোঝা যাচ্ছে না, যা মনে হয় এখন অনেক দেরি… আমি তো একটু ট্রান্সপোর্ট শুরু হলেই পালাব। তুই কী করবি?
– আমার তো সব মামা বাড়িতে গিয়ে বসে আছে, আমাকে গেলে মামা বাড়ি যেতে হবে।
– হুম…রিস্ক আছে।
– তাই তো চিন্তা। দেখি কী হয়! আপাতত এখানে তো কাটাই দিনগুলো। গরমও বেশ পড়েছে।
– তোর একটা হেয়ারব্যান্ড দিস, এবার লাগবে।
– দেখি… না। আর একটু বড় হলে দেবো!! ওই ৩ উইকসে আই থিঙ্ক।
– খুব মজা না…এমনি লম্বা চুল বলে, কোনো ডিফারেন্সই বুঝছিস না।
– আমারটাও বেড়েছে একটু…বেশি না।
– তুই আর বুঝবি কী? বছরে একদিন তো কাট করাস।
– কে বলল তোকে? ওরম হলে চুল আমার হাঁটু অব্দিই হতো।
– একটা কথা বল, যদি ওরম হয়, হোস্টেলে নাপিত কাকাকে অত গাল কেন দেয়া হচ্ছে? আর ঐ পার্লার দিদিকে নয়! – পার্লার এ তো এ্যালাউডই না কি করবে? পার্লারে মেশিনগুলো লাগে যেটা ক্যারি করতে পারবে না। মেয়েদের তো শুধু হেয়ারকাট আর আপারলিপস হয় না। অন্য অনেক কিছুই প্যাম্পার করে…হি হি।
– যাই হোক, তোর কি এখন কাটিং করার প্ল্যান ছিল?
– অত কি লম্বা হয়েছে রে? দেখ।
– সে আমি কি করে জানব! হলেও বা কী, কে কাটবে?
– তুই আগে আমার চুল দেখিসনি নাকি? ন্যাকামো না তোর!
– আচ্ছা ঠিক আছে; অনেক লম্বা হয়েছে। এবার কাটবি? কী কাটবি বল?
– থাক লম্বা কাটার দরকার নেই। হি হি…দেখি লাগলে বলব কোনো মেয়েকে।
– আমি কি কেটে দিব? 😛
– আচ্ছা? খুব শখ না? কেটেছিস কারোর? শুনি তো বাবু আগে
– সে তো লকডাউন…এ ও আগে কোনো দিন থাকে নি, তোরটা থেকেই শুভারম্ভ করি।
– আচ্ছা…আমি হলাম ল্যাব র্যাট? বাহ বাহ!! খুব আনন্দ মনে তোর
– 😁
– উমম ট্রিম করাতে পারি দৌ…বাট সত্যি তুই পারবি?
– আমি জানি না…সত্যি কথা বলতে করিনি কোনোদিন…বাট না পারারও কিছু নেই।
– আচ্ছা…ক্রাফটে কেমন ছিলিস? তা বল আগে ওখান থেকে বুঝব।
– এ+ তো পেয়েছি।
– তাহলে তো ঠিক ঠাক করতে পারা উচিত।
– তাহলে কি তুই সিরিয়াস?
– হ্যাঁ সিরিয়াস…কতটা কাটবি? বলেই টার্নড এরাউন্ড…বেণীটা তোমার সামনে।
– সেটা পরে হবে, আগে বল কাটব কোথা? রুমে তো যাওয়া যাবে না, একজন অপরের রুমে যাওয়া বারণ…
– আচ্ছা…আমাদের ঐ মিউজিক রুম? সেটা তো খালি থাকেই।
– নোংরা হবে। ওপেন জায়গা চাই। টেনিস কোর্ট বা ফুটবল মাঠে?
– সব হা করে দেখবে রে…
– কত জনই বা আছে? আর দেখলে নাহলে আমার কিছু আর কাস্টমার হবে! 😛
– ওহ অলরেডি প্রমোশনের প্ল্যান? বিজনেসম্যান!!
– তুই কাঁচি নিয়ে চলে আয় বিকেলে, আর চিরুনি অবশ্যই…আর কি লাগবে তুই দেখে নে…আমার খাওয়া শেষ। আমি গেলাম ঘুমাতে।
–আচ্ছা…দেখা হবে…টেনিস কোর্টে।
২য় দৃশ্য
সন্ধ্যা, মেধা ইতিমধ্যেই কোর্টে অপেক্ষা করছিল।
– আমি ভাবলাম, তুই আসবি না।
– কই রে… এত লেট? শুধু ঘুমই আমি আগেই এসে ওয়েট করছি।
– স্যরি…এনেছিস সব?
– মেধা ব্যাগটা দেখায়…আছে!!
– তো কতটা কাটবি? বেণীটা খোল এবার…
– দাঁড়া বলেই ও ব্যান্ডটা খোলে…এই নে তোর জন্যে…ঝুঁটি করিস…কী নাপিত! চুল ক্লায়েন্টকে দিয়ে খোলাচ্ছে!!
– আরে ক্লায়েন্টের অওকাত দেখে নাপিত কাজ করায়। 🤪
বল বল, কতটা কাটব?
– ট্রিম করাব ভেবেছিলাম… হোয়াট ডাজ মাই নাপিত সাজেস্ট?
– নাপিত ইজ কনফিউজড…মাগো আমার। ট্রিম কাট আদি না বলে, হাত দিয়ে দেখাও কতটা কাটব।
– দাঁড়া…বেণীটা খুলি।
– (আঙ্গুল পাস করল, বেণী দিয়ে…চুলটাকে আলাদা করার জন্যে…) বাবা রে, চুল নাকি অন্য কিছু!
– কেন রে? চুল কি আমার? আগে ধরে টানতিস…তখন মনে নেই?
– টানতাম বলেই তো ভালো হয়েছে। বল কতটা কাটব…তাড়াতাড়ি। এরপর খেলতে যাব।
– নিচ থেকে কেটে দে না একটু। এত চিন্তা কিসের!! ঠিক করে কাটবি… সোজা করে।
– (কনুইয়ের কাছে হাত রেখে বলল) এতটা কাটব?
– আচ্ছা ঠিক আছে…কাট…ঠিক করে কিন্তু।
– ঠিক আছে… আমি চিরুনি ধরলাম, আর তোকে উল্টো করে দিলাম…চুলটা মাথার সামনে থেকে পিছনে আঁচড়াতে শুরু করলাম।
– ভালো করে আঁচড়াস…আরাম হয়।
– তুই দাঁড়িয়ে থাক। নড়িস না…(চুলটা নিচের দিকে আঁচড়াতে আঁচড়াতে বলল)
– কতটা লম্বা হলো রে?
– আর একটু লম্বা হলে, কোমর ঠেকত।
(সায়ন চুলটা আঁচড়ে কাঁচি ওঠাল।)
(মেধা দাঁড়িয়ে দেখে আশেপাশে একটা দুটো মেয়ে দাঁড়িয়ে দেখছে।)
– কাঁচিটা কনুইয়ের কাছে রাখল, কিছু চুল কাঁচির ফলার মধ্যে…
– সাবধানে কাটিস সায়ন।
– নড়বি না একদম…
– কাচছচছচ…ছছচ…
(চুলের একটু গোছা টেনিস কোর্টে পড়ল…)
– মেধা নিঃশ্বাস ছাড়ল…আওয়াজ পাচ্ছে…কাটার
– ছছছচ…কাছচছচ…চচ কাটিং চলছে।
(কোর্টের মধ্যে একটা গোছা জমা হয়ে গেল, যেটা আস্তে আস্তে ছড়াচ্ছে হাওয়ার জন্যে…)
– লেংথটা কাটা হয়ে গেছে, এবার একটু শেপ ঠিক করি…
– বাবা… শেপ… উফফ! প্রো হয়ে গেলি তো……
– বামদিকটা একটু কাটলাম…তো শেপ আপ…নে দেখ মেধা, ঠিক আছে?
– আই গিভ ইউ মাই ফোন…ফটো তুলে দেখা।
– এই দেখ…
– তুই ই তো বললি।
– এলবো বললি তো? কতটুকুন করে দিলি…উফফ।
– ঐ এরর হয় তো জানিস, সব এক্সপেরিমেন্টে…ভাল লাগছে কি?
– হাঁ ঠিক আছে… লকডাউনে আবার বেড়ে যাবে। নো চাপ…থ্যাংক ইউ মিঃ নাপিত।
– তাহলে চাপ কিসের, বাড়িতে তো যাচ্ছিস না, যে ঝাড় খাবি।
আবার লাগলে বলিস, আবার কেটে দেবো। 🙂
– হা হা নিশ্চয়ই যা করেছিস। আই গেস কিছু… অনেক মাস না কাটলে চলবে।
– ছো আমি পালালাম, খেলতে…তুই এই চুলগুলো ফেলে দিস। এইখানে পড়ে থাকলে, কেস খাব দুজনেই।
– যাওয়ার সময় ডাস্টবিনে ফেলে দে না… আমি যাচ্ছি অই শম্পাদের দিকে। প্লিজ প্লিজ প্লিইইসস।
– তুই রেখে দে, প্যাক করে, আমি পরে ফেলে দেবো।
আমি কাটলাম, টাটা…ডিনারে দেখা হবে।
– আচ্ছা টাটা… মেধা চুল জড়ো করতে লাগল… আর নিজের চুলে হাত দিয়ে দেখল।
No comments:
Post a Comment