Sunday, June 28, 2020

শিশুর খাবার কিনতে নিজের চুল বিক্রি করে দিলেন মা

এলাকায় নতুন হওয়ার কারণে কারও সহায়তা পাননি বলে জানান ওই নারী


দুইদিন ধরে ঘরে কোনো খাবার নেই। ত্রাণের জন্য ঘুরেছেন অনেকের দরজায়। নিজের ক্ষুধা হয়ত সহ্য করা যায়, কিন্তু আঠারো মাসের শিশুর কান্না যেন মায়ের বুকে শেলের মতো ধাক্কা দেয়। তাই হকারের (চুল ক্রেতা) কাছে মাথার চুল বিক্রি করে সন্তানের মুখে খাবার তুলে দিয়েছেন এক নারী।

ঢাকার সাভারের ব্যাংক কলোনি এলাকায় বসবাসরত ওই নারী সোমবার (২০ এপ্রিল) দুপুরে এমনটিই জানান।

সাথী বেগম নামে ওই নারী কাজের সন্ধানে ময়মনসিংহ থেকে মাস চারেক আগে রাজধানীর মিরপুর ও তার কিছুদিন পর সাভারের ব্যাংক কলোনি এলাকায় আসেন।

সাথী বলেন, কয়েকদিন ধরে দুই সন্তানকে নিয়ে না খেয়ে থেকে ত্রাণের জন্য দৌড়াদৌড়ি করেছি। কেউ কোনো সহায়তা করেনি। সম্প্রতি বাড়ি ফেরার পথে পরিচয় হয় এক হকারের (চুল ক্রেতা) সঙ্গে। সে চুল দেখে তিন-চারশ' টাকা দেওয়ার বললেও ১৮০ টাকা দিয়ে চলে যায়।

তিনি বলেন, এলাকায় নতুন হওয়ার কারণে তিনি কারও সহায়তাও পাননি।

সাথীর স্বামী মানিক পেশায় দিনমজুর, তিনি নিজেও বাসা-বাড়িতে কাজ করেন। করোনাভাইরাস সংক্রমণ শুরু হলে দু'জনেই বেকার হয়ে পড়েছেন। হকারের কাছ থেকে পাওয়া টাকা দিয়ে বাচ্চার জন্য সামান্য পরিমাণ দুধ ও এক কেজি চাল কিনেছেন।

এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে সাভার উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) আব্দুল্লাহ আল মাহফুজ বলেন, বিষয়টি আমার জানা নেই। এমন হয়ে থাকলে তা অত্যন্ত দুখঃজনক। খুব দ্রুত ওই পরিবারকে ত্রাণ পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা করা হবে।

কথা বলা হলে সাভার পৌর মেয়র আব্দুল গনি জানান, তিনি পৌর এলাকার অনেক হতদরিদ্রদের মাঝে ত্রাণ বিতরণ করেছেন। তবে বাচ্চার খাবারের জন্য কেউ চুল বিক্রি করেছেন, এমনটা তার জানা নেই।

{ঢাকা ট্রিবিউনে ২১ এপ্রিল, ২০২০ থেকে সংগৃহীত}

Wednesday, June 24, 2020

ভালোবাসার প্রবঞ্চনায় চুল কেটে ফেলা

আমার নাম রেহনুমা। বয়স ২৪। আজ আমাদের ৩য় বিবাহ বার্ষিকী। 
অবশ্য এবারই প্রথম বিবাহবার্ষিকী পালন করা হচ্ছে। কারন আমার স্বামীর মুড যে হঠাৎ চেঞ্জ হওয়া শুরু করেছে। আমার চুল কাঁধ পর্যন্ত পৌঁছানোর পর থেকেই আমাকে ছাড়া আর কিছু বুঝেনা।
তবে বিয়ের প্রথম প্রথম আমাকে একদমই ভালোবাসতনা। না জানি আগের মত হাঁটুর নিচ অব্দি চুল হলে কি অবস্থা হবে!
হ্যাঁ ঠিক পড়েছেন আমার হাঁটুর নিচ অব্দি চুল ছিল সেই গল্পই আপনাদের উদ্দেশ্যে লিখতে যাচ্ছি।
ছোটবেলায় আমাকে চুল বড় করতে দিতনা। প্রতি মাসেই সেলুনে নিয়ে যেত চুল ছাঁটাতে। মা বলতো রেহনুমার চুল এত দ্রুত বাড়ে প্রতি মাসে সেলুনে নিতে নিতে বিরক্ত হয়ে যাই।
সেলুনের নাপিত আংকেল আমার চুল ছাঁটাতে গেলেই বলত অনেক সিল্কি, শাইনি আর ঘন চুল। বলতো চুল লম্বা রাখলে একদম আকাশের পরীর মত লাগবে! তখনকার সেই ছোট চুলই কেমন জানি ন্যাচারালি রাউন্ড শেপ হয়ে এবং সুন্দর ভাবে কার্ল হয়ে থাকত।
চুল বড় রাখার পারমিশন পাই ক্লাস সিক্সের পর হতে। ক্লাস নাইন-টেনে পড়তে ততদিনে কোমড়ের নিচ পর্যন্ত চুল।
সবাই চুল দেখে বলত এত সুন্দর চুল আমি নিশ্চই কোন পার্লারে গিয়ে এমন চুল বানাইছি। অনেকে ত আবার নকল চুল বলত।
মাথাভরা এত ঘন লম্বা চুল বেধে রাখাও খুব কষ্টকর ছিল কারন চুল এত সিল্কি। আমার মা আমার চুল দেখলেই কেন জানি সহ্য করতে পারতনা। ভাবত আমি পড়ালেখা বাদ দিয়ে নাকি সারাক্ষণ চুল নিয়ে পড়ে থাকি। মা বলতেন– দেখবি একদিন তোর এত চুল সব ঝরে পড়ে যাবে।
আত্মীয়-মেহমান যখন আমার চুলের প্রশংসা করত তখন মা বাবা বলতো আমার চুলের পিছে নাকি অনেক টাকা খরচ হয়। অথচ অনেক টাকা দূরে থাক আমাকে নিয়মিত ২ টাকার শ‍্যাম্পু কিনবার টাকাও দিতনা। তাই গায়ে মাখাবার সাবান দিয়ে কখনো বা কাপড় কাচার সাবান দিয়ে কাজ চালাতে হত। মায়ের উকুনওলা পুরাতন চিরুনি ব‍্যবহার করতে হত।
তবে এত কিছুর পরও আমি আমার নিজের চুল অনেক ভালবাসতাম। কারণ এত সুন্দর স্টাইল হয়ে থাকতো চুল আয়নার সামনে নিজের চুল ছুড়ে মারতাম আর ভাবতাম নিজের ভালবাসার মানুষকে ছোঁয়াচ্ছি।
এত ঘন ছিল বিছানায় ছড়িয়ে রাখলে বিছানার অনেকখানি যায়গা ভরে যেত।
আম্মুর দাঁতভাঙা চিরুনি দিয়ে চুল আচড়ালে অনেক জট লাগতো তাও চুল পড়তনা এত মজবুত চুল।
এত সিল্কি, কোমল, মোলায়েম ছিল যে বারবার খালি মুখমন্ডলে ডলতাম আর চুমু দিতাম। জড়িয়ে ধরে থাকতাম।
যখন ইন্টারে পড়ি ততদিনে হাঁটুর নিচ অব্দি লম্বা হয়েছে। অনেকগুলো ক্লিপ ও কাঠি দিয়ে অনেক কষ্ট করে খোপা বেঁধে স্কার্ফ দিয়ে ঢেকে ক্লাসে যেতাম। কিন্তু খোঁপা অনেক বড় বুঝা যেত।
ক্লাসে বান্ধবীরা চুল খুলতে বললেও খুলতে চাইতাম না। (গার্লস কলেজ সেহেতু ছেলে ছিলনা ক্লাসে তবুও) কিন্তু বান্ধবীদের অনেক আবদারে খোঁপা খোলার পর উন্মুক্ত চুলে আমাকে দেখে সবাই অভিভূত।
আমার কিছু বান্ধবীদের চুলও অনেক সুন্দর কিন্তু তারা বলে আমার চুল নাকি ক্লাসে সবচেয়ে সুন্দর। কেউ কেউ বলল— এত লম্বা চুল দিয়ে কি করবি আমারে তোর থেকে অর্ধেক কেটে দে প্লিজ দোস্ত! পরচুলা বানিয়ে পড়ব।
তখন নকীব নামের এক ছেলেকে ভালবেসে ফেলেছি। কিন্তু বলতে পারতাম না লজ্জায়। আর তাছাড়া আমার চেহারা যেমন তেমন কিন্তু শরীর একটু মোটাসোটা। পরে একবার কয়জন বান্ধবী আমাকে ঠেলে দিয়ে ওর সাথে ধাক্কা দেয়ার মাধ্যমে প্রথম আলাপ হলো।
প্রথম প্রথম ও আমাকে তেমন পাত্তা দিতনা আবার ঐ টাইমে আবার মাছেল নামে আরেক ছেলে আমাকে পছন্দ করত আর আমার ক্লাসমেট বান্ধবীদের বলে আমি নাকি অনেক সুইট দেখতে। আমি ওকে এড়িয়ে যাওয়ায় একবার হাতও কাটছিল, বান্ধবীদের সামনে দুঃখে কেঁদেও ফেলছিল। কিন্তু আমি পাত্তা দিতাম না কিন্তু এখন বুঝি তার এই আবেগ মিথ্যা ছিল না। কিন্তু তখন আমার একমাত্র ভালবাসা ছিল শুধু নকীব।
পরে আস্তে আস্তে রিলেশন হয় নকীবের সঙ্গে। ছবি নিতে চাইত প্রথমে দিতে চাইতাম না। পরে ব্রেক-আপ করবে বলাতে দিতাম। এভাবে ভালই চলছিল।
এরপর কয়েক মাস পর থেকে আমার সাথে হতাত ব্রেক-আপ করতে চাচ্ছে। অনেক রাগারাগি খারাপ ভাষায় গালাগালি। আমার মাঝে কোন দোষ পেল সেটা জানতে চাইলাম; বললাম কি জন্য ব্রেক-আপ করতে চাচ্ছ? লাস্টে অনেক আবোলতাবোল কথা শেষে বলে আমার চুল বেশি লম্বা।
বান্ধবীদের বলাতে তারা বুদ্ধি দিল আমার জন্মদিন সেলিব্রেট করার জন্য কাছেই পার্কে যাব যেখানে নকীব প্রতিদিন সকালে গিয়ে আড্ডা দেয়। সেখানে গিয়ে হিজাব খুলে পরে মাথার সব ক্লিপ আর খোপার কাঠি খুলে আমার চুল নিয়ে খেলা করতে লাগলাম সব বান্ধবীরা দৌড়াদৌড়ি খুনসুটি একজন আরেকজনকে ধাক্কা দিতে থাকলাম।
ছেলে মেয়ে সবাই দেখি হা করে তাকিয়ে আছে। পার্কের বেঞ্চ দখল করা প্রেমিকরা তাদের প্রেমিকাকে ভুলে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। আর বয়স্ক হাওয়া খেতে আসা লোকরা বিরক্তির দৃষ্টিতে দেখছে।
সবচেয়ে ভালো লাগল যখন দেখি নকীবও হাবাগোবার মত তাকিয়ে আছে। আমার কাছে আসলো। আমতা আমতা করে কি জানি বলতে চাচ্ছে। ও বলার জন্য মুখ হা করতেই এক পিস কেক ওর মুখে দিয়ে বললাম কি বলতে চাও বলে ফেল। তুমি তো ব্রেকআপ করতে চাইছিলা।
ও মুখস্থ বলে ফেলল- হ্যাঁ তা তো করবই তোমাকে আর ভালো লাগেনা "
আমিও সঙ্গে সঙ্গে আবেগে বলে ফেলি— প্লিজ আমি তোমাকে অনেক ভালবাসি। সব কিছু ছাড়তে পারব কিন্তু তোমাকে না।
সে বললো ‘সত্যি সবকিছু ছাড়তে পারবে?’ আমি কোনো দ্বিধা না রেখে হ্যাঁ বললাম। –'তাহলে তোমার চুল সব কেটে ফেলতে পারবে?' 


আমি কিছুক্ষণ নীরবে থেকে ভাবার পর বললাম হ্যাঁ পারব। তৎক্ষণাৎ রওনা দিলাম  সেলুনের দিকে। বান্ধবীরা আমার পিছু পিছু আসছিল আর সমানে বলেই যাচ্ছিল ‘‘প্লিজ রে এমন পাগলামি করিস না!"
সেলুনে প্রথমে হেয়ার ওয়াশ করা হল। তারপর রাবার ব্যান্ড দিয়ে ঝুটি বানানো হল কাটার জন্য। অনেক মোটা ঝুটি তাই কাটতে অসুবিধা হচ্ছিল। তাই খোলা চুলেই একে একে চুল কাটছিল আর বাইরে দাঁড়ানো বান্ধবীদের কেউ কেউ কান্না শুরু করে দিয়েছিল।
আমার এত দিনের যত্ন, এতদিনের ভালবাসা সব আস্তে আস্তে মাথা থেকে আলাদা হয়ে ফ্লোরে পড়ছিল ভেবে কষ্টে বুকের ভেতরটা খানখান হয়ে যাচ্ছিল।
চুল সব কাটা হয়ার পর আর কান্না ধরে রাখতে পারিনি। বান্ধবীদের কেউ কেউ আর থাকতে না পেরে পার্লারের ভিতরে এসে আমাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে আরম্ভ করল আর বলল তুই এমনটা কেন করছিস। ওদের কান্না দেখে আমার চোখও বাঁধ মানল না।
এরপর নিজেকে সামলে নিয়ে ওদের সরিয়ে দিয়ে বললাম ইলেক্ট্রিক রেজর দিয়ে চুল ন্যাড়া করতে।
নাপিত নিচে পড়ে থাকা সিল্কি চুলের গোছা কুড়িয়ে আমার হাতে দিল।
আমি আর দেরি করিনি। নিজের শত ভালবাসার চুলগুলো নিয়ে ডাস্টবিনে ফেলে দিতে যাই কিন্তু পারলাম না তাই আমার এক বান্ধবী যে অনেক দিন আগে আমার চুল দিয়ে পরচুলা বানিয়ে পরবার বায়না করেছিল ওকে গিয়ে দিয়ে আসলাম। ও আমার হাত থেকে চুল  নিতে গিয়ে হতবাক হয়ে গেল। এবার আমার আশা ছিল এই স্যাক্রিফাইসের পুরষ্কার হিসাবে আমি নকীবের মন পাব।
পরে যখন নকীবের সাথে একাকী দেখা করে আমি হিজাব খুলে দেখাই নিজের ন্যাড়া মাথা। সে হাসতে হাসতে বলে “এই তো এইবার সেই লাগছে।” আমি জিগ্গেস করলাম ‘এখন থেকে ত তাহলে তুমি আর ব্রেকআপ করবে না।'
সে এবার হাসতে হাসতে বলল– "আমি কখন বললাম চুল কাটলে আমি আর ব্রেকআপ করবনা? আমি শুধু দেখতে চাইছিলাম তুমি আমার জন্য কত কি করতে পারো।”
‘'আর এই ভালবাসার আমার কোন দরকার নাই কারন এমন মেয়ে আমার পিছে আরো পাঁচ ছয়টা ঘুরে। তোমারে দেয়ার মত সময় আমার নাই” এইটা শুনবার পর কান্নায় বুক ভেঙ্গে পড়ে!
পরে জানতে পারি ও এইরকম অনেক মেয়ের সাথেই রিলেশন চালায় আর কয়দিন পর ব্রেকআপ করে ফেলে। এমনকি কারো কারো সঙ্গে ফিজিক্যাল রিলেশন করেছে। আমার শরীরের বাঁক এতটা সুন্দর না সেকারণে ও আমার সঙ্গে ফিজিক্যাল রিলেশনে যেতে চায়নি। এক্ষেত্রে বলা যায় আমি তুলনামূলক ভাগ‍্যবতী।
আমি আর এই কষ্ট ধরে রাখতে পারছিলামনা। আম্মু আব্বুকে তাই বিয়ের সম্বন্ধ খুঁজতে বলে দিই। উনারা ইন্টার পাশের পরপরই বিয়ে ঠিক করে বিয়ে করিয়ে দেয়।
পাত্র বয়স প্রায় আমার দ্বিগুণ, মাথায় টাক। একটা নামীদামী বেসরকারি ব্যাংকের ব্রাঞ্চ ম্যানেজার তাই এই লোভনীয় অফার আর হাতছাড়া হয়নি।

প্রথম প্রথম স্বামী ভালো না বাসলেও যখন থেকে চুল বড় হওয়া শুরু হয়েছে পরিস্থিতি পাল্টে যাচ্ছে।
জানিনা নকীব এখন কি করছে হয়ত আরেক মেয়ের জীবন নিয়ে খেলছে। আমার কোন জানার ইচ্ছা নেই আমি শুধু এই নিষ্ঠুর অতীতকে ভুলে ভবিষ্যৎকে আঁকড়ে ধরে বাচতে চাই। 

[সংগৃহীত ও ঈষৎ পরিমার্জিত]

চুলের জন্য ভালোবাসা

দাদুর গ্রামে বেড়াতে এসেছি আমার দাদুর প্রায় ১০০ বছরের পুরানো বাংলো দেখার জন্য। সেখানে আমার পরদাদার বড় ভাই (আমারও পরদাদা) এর পার্সোনাল রুমে ঢুকলাম।
সেখানে কিছু জিনিস পত্র পেলাম যেগুলার মধ্যে আমার চোখ গেলো একটা সিন্দুকের দিকে।

সেই সিন্দুকের ভিতর দেখলাম প্রায় সাড়ে ৫ ফুট লম্বা খুব মোটা চুলের বেণী। খুব সুন্দর চুলের কালার, শাইনি আর ধরে এত কোমল লাগছিল মন চাচ্ছিল ধরে চুমু খাই, মুখের সাথে ধরি আর চুলের গন্ধ নিই।

কিন্তু তা করলাম না কারন সিন্দুকে প্রচুর ময়লা জমে ছিল মনে হয় ১০০ বছর ধরে পরিষ্কার করা হয়নি কিন্তু চুলের বেণীটা পরিষ্কারের পর দেখা গেল ১০০ বছরেও তার ঔজ্জ্বল্য, লাবণ্য একটুও ক্ষয় হয়নি।

আর পেলাম একটা ডায়রি আমার পরদাদার। এখানে হয়ত থাকতে পারে এই বেণীর রহস্য। যাক পরিষ্কার করে পড়া শুরু করলাম যেভাবে লেখা…

২৪ জানুয়ারি, ১৯১৬
আমার নাম সুব্রত গুহ বয়স ৩০। আমি এখন কোলকাতায় খুব ভাল একটা চাকরি (তখনকার ইংরেজ আমলে) করি তাই মা বাবা তোড়জোড় করছে বিয়ে করাতে।
সাহেবদের সাথে কাজ করার সুবাদে আমি যেকোন যুবতীকে বিয়ের প্রস্তাব দিতে পারি তবে আমার অনেক দিনের স্বপ্ন এক বিধবাকে বিয়ে করব। বিধবার হারানো সংসার ফিরিয়ে দিব।

কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে বিধবা সম্বন্ধ পাওয়াও দুষ্কর হয়ে দাড়িয়েছে। মা দাদা-বৌদিরা বলছে এ জেদ বাদ দিতে। কিন্তু আমি ধৈর্য ধরে অপেক্ষা করলাম আর অবশেষে পাওয়াও গেল।

২৮ বছরের মহিলা তার প্রায় ১১ বছরের ছেলেও আছে। মহিলা গায়ের রঙ তামাটে, কিছুটা স্থূল গড়ন, চেহারাও মায়াহীন কেমন যেন রাগী রাগী ভাব। তবে একটা জিনিস আমার চোখে পড়লো তার অনেক বড় খোঁপা। পুরো মাথা শাড়ির আচলে ঢাকা কিন্তু দেখে বুঝা যাচ্ছিল খোঁপা খুব বড়।

মহিলার নাকি দ্বিতীয় বিয়েতে একেবারেই ইচ্ছে নেই কিন্তু পরিবার জোর করছে খুব। ইনি তার স্বামীকে খুব ভালবাসতেন তার মৃত স্বামীকে ছাড়া আর কাউকে তার জায়গায় আসতে দিবেন না।

২০ আগস্ট, ১৯১৬
যাক বিয়ের পর আজ আমাদের ফুলশয্যা। তবে আমার সদ‍্যবিবাহিত স্ত্রী এতে রাজি নন তিনি নাকি আলাদা ঘরে একা ঘুমাবেন।
তার ঘরে গেলাম দেখি তাকে খোলা চুলে। প্রায় হাঁটুর নিচ পর্যন্ত এত সুন্দর চুল কখনো কল্পনাও করতে পারিনি। পাহাড়ি ঝর্ণার মত এত সুন্দর ভাবে ঢেউ খেলানো, এত ঘন ঝলমলে।
সে হঠাৎ আমায় দেখে ঘাবড়ে গেল। দেয়ালে তার হাঁটু অব্দি রেশমি চুলের পিঠ ঠেকালো যেন আমি দেখতে না পাই। তার সামনের চুলগুলো কেনো জানি এমন ভাবে বাকানো তার চেহারাটা অপরূপা লাগছে।
সে প্রতিনিয়ত মুখমণ্ডল থেকে চুল সরাচ্ছে আর রাগে লাল হয়ে বলছে “বের হন তাড়াতাড়ি এই ঘর থেকে নাহলে কিন্তু আমি লোকজন ডাকব, এক্ষুনি যান আমি আপনার কোন ক্ষতি করে ফেলব, শেষে একটা কাঁচের গেলাস ভেঙ্গে নিজের গলায় ধরে বলে নিজেকে শেষ করে ফেলব।"

সে এত রাগছে আর গালিগালাজ করছে তবুও তার সামনের চুলের জন্য তাকে এত সুন্দরী লাগছে যে মন চাচ্ছে জড়িয়ে ধরে চুমু খাই কিন্তু সে বিরক্ত হচ্ছে ভেবে চলে আসলাম।
রুম থেকে বের হওয়ার সাথে সাথে দ্রাম করে দরজা লাগিয়ে দিলো। আজ বুঝতে পারছি নারীর আসল সৌন্দর্য তার চুলে। না হলে যেই মহিলাকে দেখতে আহামরি সুন্দর না তাকে আজ খোলা চুলে দেখে আমি অদ্ভুত আকর্ষণ অনুভব করছি।

২১ আগস্ট,১৯১৬
সেদিনের কথা আর ভুলতে পারছিনা। তার এত সুন্দর দেখতে পা অব্দি লম্বা ঘন রেশমি খোলা চুল। তার সামনের চুলের জন্য তার চেহারা কিভাবে। কিভাবে চুল খুললেই এক নারির চেহারা পুরো পরিবর্তন হয়ে যায়। কিভাবে চুল খুললেই এক সুদর্শনা অপ্সরা তে পরিনত হয়ে যায়। এমন জাদুকরী চুল তার।
তার ১১ বছরের ছেলের থেকে জানতে পারি তার বাবার খুব প্রিয় ছিল তার মার চুল তাই চুল কাটেনি। কিন্তু তার বাবার মৃত্যুর পর থেকে চুল একেবারেই যত্ন নেয়া বন্ধ করে দিয়েছে। আঁচড়ায়না, তেলও দেয়না। গোসলের সময় মাথা ভেজায় না যেন চুল না ভিজে। খোঁপা খুলতে সচরাচর দেখা যায়না। বিভিন্ন ভাবে অবহেলা করে যেন চুলের লাবণ্য শেষ হয়ে যায় আর কোন পুরুষ যেন তার চুল দেখে পাগল না হয়ে যায়।

আমি তো পাগল হয়ে গেছি। আর প্রায় ১০ বছর ধরে অযত্নের পরও এত সুন্দর চুল ভেবেই আরো পাগল হই। না জানি প্রথম স্বামীর সময় কত লাবণ্যময়ী ছিল তাহার কেশ। তার ছেলেও নাকি তার মায়ের চুলের পাগল। তার মাকে খোলা চুলে দেখলেই চুলে চুমু খায় আর মুখমন্ডলে নিয়ে মাখে। এসব কখনো পুরান লাগেনা তার কাছে।

২৩ সেপ্টেম্বর, ১৯১৯
প্রায় ৩ বছর হয়ে গেলো আজো তার সাথে একটা রাত ও কাটানো হয়নি। সেই প্রথম যে তাকে খোলা চুলে দেখা আর এত বছর ধরে তার চুলের দেখা পাইনা। সব সময় মাথা আচলে ঢেকে রাখে। তার উপর প্রতিনিয়ত নানান খারাপ ব্যবহার করে সবার সাথে। সংসারের সব কাজ হয় আমার মা, বৌদিদের অথবা আমাকে করতে হচ্ছে। কাল তো সে আমার মায়ের গায়ে হাত তুলেছে! কেউ আমার মাকে কিছু বললে আমি সহ্য করতে পারিনা তার উপর গায়ে হাত তুলল! তবুও তার প্রতি আমার ভালবাসা কেন?
সে সেদিন বললো, "যতদিন আমাকে ঘরের বউ করে রাখবেন এসব সহ্য করে যেতে হবে!"

২০ সেপ্টেম্বর,১৯২০
নাহ! আর পারা যাচ্ছেনা। এভাবে আর কতদিন পারা যায়। আমরা গেলাম ডিভোর্স নিতে কোর্টে।
অফিসার বললো অমুক অমুক জায়গায় সাইন করতে এরপর বলল বাইরে গিয়ে অপেক্ষা করতে।

আমরা বসে আছি হঠাৎ হালকা বাতাস আসল; আমার বউ এর কিছু চুল বাতাসে উড়ছিল আর খেলা করছিল। আমার দেখে আবার প্রেম জেগে উঠলো মনে। কিছুক্ষন পর মাথা থেকে শাড়ির আচল সরে গেলো। তার এত সুন্দর খোপা দেখে আমি আবার যেন পাগল হয়ে গেলাম হারানো সেই অতীত অনুভুতিতে।

তার কাছে গিয়ে বললাম “শুনছো, ডিভোর্সটা না নিলে হয়না"। সে কিছুক্ষণ আমতা আমতা করার পর বলল– মাথা থেকে ভূত এখনও যায়নি? আমি বললাম একটু বুঝার চেষ্টা করো আমি তোমার ওই চুলের পাগল! যেদিন থেকে তোমাকে খোলা চুলে দেখেছি। তুমি এখন থেকে যত খুশি আমাদের সাথে খারাপ ব্যবহার করো তবুও আমাকে ছেড়ে চলে যেয়োনা আমি তোমায় ছাড়া বাঁচবো না।

সে কিছুক্ষণ ভাবার পর বলল: চলুন আমার সঙ্গে। আমাকে নিয়ে গেল কলকাতা শহরের বাইরের এক নাপিত বাড়িতে। সেখানে গিয়ে নাপিতবৌ বলে হাঁক পাড়তেই একজন মহিলা বেরিয়ে এসে; আ লো গিন্নিমা বলে গড় করে প্রণাম ঠুকে বলল আহা কদ্দিন পর পায়ের ধুলো দিতে এলেন? নাপিত বৌয়ের মাথায়ও একটা বড় সুন্দর দেখতে খোঁপা। গায়ের রঙ উজ্জ্বল শ্যামলা চিকন গড়ন চেহারা সুন্দর। আমাদের দুজনকে প্রণাম শেষে ঘরের ভিতর থেকে দুটো জলচৌকি এনে আমাদের বসতে বলল। বলল গিন্নিমা-বাবুমশাই আপনারা বসুন। আমি কিছু ফলারের যোগাড়জন্তর করি। কিন্তু আমার স্ত্রী বলেন— বসতে আসিনিরে ক্ষেমী। ক্ষেমী কিছুটা অবাক হয়ে উত্তর দেয়: এতদিন পর আমাদের ভিটায় এলেন একটু বসুন; সেবা করার সুযোগ দিন। আমার স্ত্রী এবার বলল- যে সেবা তোর পেশা তাই নিতে এসেছি। সে এর মানে বুঝল, আমিও বুঝলাম তবু মুখ ফুটে কিছু বললাম না। আমার স্ত্রী আমাকে সরে বসতে বলল আর নাপিতবৌ আমার স্ত্রীর ঘন চুলের থেকে অনেকগুলো চুলের কাঁটা সরিয়ে আর বিশাল সেই খোপাটি থেকে কাঠের চিরুনি সরিয়ে তার চুল খুলল।
তাকে আবার খোলা চুলে দেখে মন চাচ্ছে জড়িয়ে ধরি। আশেপাশে হঠাৎ চোখ পড়লে দেখি কটা ছোট ছোট ছেলেমেয়ে একটু দূরে দাঁড়ানো। সবাই হা করে তার চুলের দিকে তাকিয়ে দেখছে।
–তাহলে এদ্দিন বাদে আপনি চুল কাটবেন। কিন্তু আপনি না আবার বিয়ে কল্লেন। শ্বশুরঘরের নোকে কি বলবে? এত সুন্দর চুল কেটে ফেলবেন। কতটা কাটবেন?
–আমার সব চুল কেটে উনাকে দিয়ে দে।
–কি বলছেন গো গিন্নিমা! সবটা কাটবেন? এমন নির্দয় হলেন কি করে?
–আমি বললাম না সব চুল কেটে ফেলতে। এক বার বললে কানে যায় না? তোকে যা করতে বলি তাই কর।
ক্ষেমী একদৌড়ে ঘরে ঢুকে পিছনের দরজা দিয়ে বেরিয়ে শ‍্যামা নামের আরেকজন মহিলাকে ডাকল। তারা যখন আবার আমাদের সামনে এলো তখন তাদের হাতে একখানা ময়লা চাদর, একজোড়া কাঁচি আর চিরুনি, একখানা ক্ষুর আর আরো কি যেন ছিল।
কিছুক্ষণ রাশি রাশি চুল আঁচড়ে অতঃপর বড় একটা কাঁচি দিয়ে একে একে সব চুল কেটে ফেলতে থাকলো আর আমার মনে হলো আমার হৃদপিণ্ডেও কে যেন ছুরি কাঁচি চালাচ্ছিল। তার ঘন চুলগুলি এমন ভাবে ঢেউ খেলছিল যেন কাঁচির বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ার চেষ্টা করছে। মাথা ভরা চুল ক্ষেমী আর শ‍্যামা পালা করে কাটছিল।

সবশেষে পড়ে রইল এক বিশাল রেশমি ঝলমলে চুলের সমুদ্র। ওরা দুইজনে মিলে সেসব চুল সংগ্রহ করে বেণী বেঁধে আমার হাতে দিলো। কষ্ট ও হচ্ছে আবার এত কোমল চুল হাতে নিতে পেরে মন উতলা লাগছে।

সে এবার আমার দিকে তাকিয়ে বলল:- এখন তো আর কোন ভালবাসা অবশিষ্ট নেই আমার জন্য? এবার দয়া করে আমার জীবন থেকে চলে যান। আমার পাগল করা সেই চুল আপনাকে দিয়ে দিয়েছি। আমি বাকরুদ্ধ হয়ে গেলাম। আজ তাকে চুল কাটানোর পরও কেন যেন মায়াবী অপরূপা লাগছে কিন্তু তাকে আটকানোর কোনো অধিকারই আমার আর নেই। পুরুষের মত ছোট করা চুল সে ঘোমটা তুলে ঢেকে নিলো। আমিও সেই বেণীটা ক্ষেমীদের দেয়া একটা থলেতে পুরে তার পিছু পিছু বেরিয়ে নাপিতবাড়ি থেকে বেরিয়ে এলাম।

ডায়েরিতে এইটুকুই লেখা। এরপর আমি যতদূর জানি পরদাদার বড় ভাই অবিবাহিতই থেকে যান এবং বাকী জীবন তার প্রাক্তন স্ত্রীর চুলের ভালবাসায় কাটিয়ে দেন।

আমি আরেকবার আমার পরদাদীর সেই বেণীর দিকে তাকালাম। প্রায় শত বছর শরীর থেকে আলাদা হয়ে থাকার পরও অর্থাৎ শরীরের পুষ্টি উপাদান না পাওয়ার পর তার উপর এত বছর বদ্ধ ট্রাঙ্কে অযত্নে ময়লার মধ্যে থাকার পর এখনো এত লাবণ্যময়ী সেই চুল। না জানি তার মাথায় থাকলে আর তিনি এতদিন বেঁচে থাকলে কেমন দেখতে লাগত ভেবে আমিও যেন পাগল হয়ে যাই। অবশ্য মনে পড়ল এতদিন বেঁচে থাকলে তিনি বুড়ি হওয়াতে তার এই চুলগুলি সাদা হয়ে যেত নিশ্চয়। ভাল হয়েছে উনি এগুলো কেটে ফেলেছিলেন।

পাগল হয়ে তার সেই মোটা বেণী খুলতেই এত সুন্দর ঝলমলে ঘন মেঘের মত ঢেউ খেলানো চুল দিয়ে যেন পুরো বিছানা ভরে যাওয়ার মত অবস্থা। নিজে আর তর সইতে পারি না পরদাদীর চুলগুলো হাতে নিয়ে সারা শরীরে জড়িয়ে ধরে চুমু খাই। এখনও এত সুগন্ধ। পরে অবশ্য নিজেকে সামলে নিয়ে এগুলো আবার গুছিয়ে যত্ন করে একটা রিবন দিয়ে বেঁধে আমার ব‍্যাগে রাখলাম। এখন এটা আমার সঙ্গে নিয়ে যাব।

[সংগৃহীত ও ঈষৎ পরিমার্জিত]

Tuesday, June 23, 2020

এই চুল সৌভাগ্য নাকি শাপ

সেলুনে লাইনে বসে আছি। নিজের অতীত স্মৃতিগুলো মনে ভাসছে।
ছোটবেলা থেকেই আমার অনেক লম্বা ঘন চুল ছিল প্রায় হাঁটু পর্যন্ত পৌঁছাত। চুল আঁচড়াতে হত দুইটা খোঁপা করে একটা খোঁপা খুললেই পুরো শরীর ঢেকে যেত। আমার মায়ের খুব পছন্দের ছিল আমার চুল তাই রোজ মাথায় তেল দিত আর বলতো “তোর চুলগুলো এত সুন্দর একদম মেঘের মত এত কোমল মায়াবী"। আমার চুল দেখতেও অনেক সুন্দর ছিল চুল খুলা থাকলে মুখমন্ডল দুপাশ ঢেকে যেত। নাইন টেন ইন্টারে পড়া আপুরা বলত “তোর এত সুন্দর চুল গুলা কেটে আমাকে দিয়ে দে আমি পরচুলা বানিয়ে পড়ব এই বয়সে এত বড় চুল দিয়ে কি করবি।”
‘আচ্ছা তাহলে অন্তত অর্ধেক কেটে দে তাও চলবে'। কিন্তু মা মানা করত 'কোনদিন চুল কাটবিনা!’
শৈশব কেটেছে গ্রামেই। মাঠে ভাই-বোনদের সাথে খেলতাম। তারা কেন জানি অন্যরকম ভাবে দেখতো। মাঝে মাঝেই খোপা খুলে যেত আর রফিক বলতো 'এইভাবে তোকে একদম ডাইনির মত লাগে' তাই ওরা আমার চুল নিয়ে নানাভাবে খেলতো মাঠের মাটিতে রেখে চুলের উপর লাফালাফি করত নানা ভাবে ময়লা করত টানাটানি করত। মা তাই রাগ করত আবার খুশিও হত এত কিছুর পরও চুল ড্যামেজ হয়না।
স্কুলে যে বয়সে আমার বান্ধবীদের প্রায় সবার ছোট চুল কারো কারো সর্বোচ্চ পিঠ পর্যন্ত পৌছায় সেই বয়সে আমার প্রায় পা পর্যন্ত চুল। তাই মা শক্ত করে খোপা বেধে দিত ক্লিপ দিয়ে আর মাথায় পিন লাগাতে হত বিভিন্ন স্থানে। আমি স্কার্ফ দিয়ে মাথা পুরা ঢেকে রাখতাম তাও সবার কৌতুহল জাগতো কারন খোপা এত বড় হত। একদিন বান্ধবীদের অনেক জোরাজুরিতে স্কার্ফ খুলতে বাধ্য হলাম তারা বলল এত সুন্দর খোপা এত সুন্দর চুলের কালার রোদের আলোয় যেন ঝলমল করছে তাই আমাকে বাধ্য করলো খোপা খুলতে। এরপর থেকে আমার চুল সবার মধ্যমনি। সবাই চুলে চুমু খেতে মুখের সাথে ঘষতে লাগলো বলে এত কোমল চুল না ছুঁয়ে থাকা যায়না।
জুনিয়র বৃত্তি পরীক্ষার দিন পরীক্ষক স্কার্ফের ভিতরে এত ফোলা দেখে জিজ্ঞাসা করল স্কার্ফের ভিতরে নকল নাকি? সেটা দেখবার জন্য অন‍্য রুমে নিয়ে আসে; এরপর চুল খুলে পুরুষ পরীক্ষক সমস্ত চুলে চুমু দিতে লাগল, পরে সারা শরীর জড়িয়ে ধরে মুখে চুমু দিতে লাগল তার মুখ আমার চুলের ভিতর ডুবিয়ে রাখল বলে এত সুন্দর চুল কখনো কল্পনা করেনি। আমার এত খারাপ লাগছিল কষ্টের কথা মা বাবাকে বলাতে তারা চুল ন্যাড়া করে দিলো। ইন্টারের এক বড় আপু আফসোস করে বললো 'এত সুন্দর চুল ডাস্টবিনে ফেলে না দিয়ে আমাকে দিতি’
ক্লাস টেনে পড়ার সময় চুল আবার হাটুর নিচ পর্যন্ত এখন। এই চুলের জন্য বান্ধবিদের কারো কাছে ঈর্ষার পাত্রী তো কেউ কেউ আমার চুলের পাগল। বারবার আমার খোপ খুলতে চায় যা আমার ভালো লাগেনা।
তখন হোম টিউটরের প্রেমে পড়ে যাই যদিও আমি গায়েগতরের দিক থেকে দেখতে তেমন সুন্দর না। গায়ের রং শ্যামলা কিছুটা মোটা গড়নের। বান্ধবীরা বলত খোলা চুলে তোকে দেখলে এমনিই প্রেমে পড়ে যাবে। কিন্তু আমার ইচ্ছা করত না এমন করতে। সেই রফিক স্যার আমাকে একদম পাত্তা দিতনা কথায় কথায় পড়া না পাড়লেই রাগতো পানিশমেন্ট দিতো তাই একদিন উপায় না পেয়ে খোলা চুলে পড়তে বসলাম। স্যার এর চোখ সরাতে পারছেনা সেইদিন খুব ভাল ব্যাবহার করলো। পানিশমেন্ট দিতে চাইলে লম্বা চুল তার দিকে মারতাম শরিরে ছোয়াতাম সে বললো "দে-দেখো এ-এসব কিন্তু ঠিক হচ্ছেনা"। তখন থেকে পড়াতে এসে শুধু আমার খোঁপা খুলতে চাইত। গোসল করে আসার পর আমার চুলের গন্ধ দিতে চাচ্ছে আমি গামছা দিয়ে চুলের ঝাপ্টা মারলাম। 

এবার আচমকা স‍্যারের মোহভঙ্গ হল। ‘'নাহ্ এসব ঠিক হচ্ছেনা। আমি এসব কি করছি ছাত্রীর সঙ্গে!’' আমি তোমার চুল সব কেটে ফেলব এক্ষুনি বড় একটা কাঁচি আনো।
তার মন জয়ের জন্য আমি যেকোন কিছু করতে পারতাম। তাই যেমন বলা তেমনি করা। প্রায় দু'হাত চুল ধরল কাটবার জন্য। আমি বললাম আরো বেশি করে কাটেন। অনেকখানি কাটার পর অনেকট লম্বা তাই স্যার কে বললাম আপনার প্রাণে যতখানি চায় কাটেন। স্যারের হাত কাঁপা শুরু করল। তারপর থেকে স্যার আমার চুলের পাগল।
তবে বাবা মা এত আহ্লাদ পছন্দ করেনি। ইন্টার পাশের পর বিয়ে দিয়ে দেয়। তখন চুল আবার আমার চুল হাঁটু ছুঁই ছুঁই।
হঠাৎ আওয়াজ এলো "ম্যাম আপনার সিরিয়াল এসেছে চলুন" চোখ ঘোরাতেই দেখি সেলুনের এক কর্মী। চেয়ারে গিয়ে বসলাম। নাপিত খোঁপার পেন্সিল আর মাথার পিন গুলো খুলার পর বেরিয়ে আসলো এক মেঘ চুল। চেয়ার আর উচু করা যাচ্ছেনা বলে নাপিত।
আমার কি কপাল! আমার মত সুকেশার কপালে জুটল কিনা এমন এক স্বামী যে লম্বা চুল ঘৃণা করে। বিয়ের পর আমার মাথা ভরা চুল দেখার পর রাগে আগুন। কিন্তু শাশুড়ি ও মায়ের মত লম্বা চুল কেটে ছোট করতে একদম মানা। এদিকে শ‍ শ্যালিকা আমাকে দেখতেই পারেনা বলে: “দেখব কতদিন তোমার এই চুল থাকে।"
আমার স্বামী সবসময় হয়ত ইচ্ছে করেই ডেট ওভার হওয়া শ‍্যাম্পু, তেল আনতো আমার জন্য। আমি এগুলো হাসিমুখে ব‍্যবহার করতাম। আলাদা বাসা নেয়ার পর থেকে আরও অনেক কিছু শুরু হয়। যেমন ময়লা কাপড়ের পরিবর্তে আমার লম্বা চুল দিয়ে ঘর মুছাতো। এত জোড়ে টান দিয়ে মোচড়াতো যে খুব ব্যাথা হত আর বলত ‘যতদিন তোর এই চুল থাকবে ততদিন তোর প্রতি আমার কোন ভালবাসা নাই।’ শাশুড়ি কেবলই বলে "সমস্যা নেই একদিন তোর চুলে পাগল হয়ে যাবে আমার ছেলে দেখিস।"
যাক এসবের মাধ্যমে একবার চুল পড়া শুরু হলে আর এই সৌন্দর্য থাকবেনা তখন মা শাশুড়ি কে মানাতে পারব চুল কাটতে। কিন্তু আমার কি কপাল। এত কিছুর পর ও একটা চুলও পড়েনা। চুলের শাইন আর লাবণ্য একটুও কমেনা। কেন যে এমন চুল নিয়ে জন্মালাম।
৭ বছর পর, আজও সে আগের মতই ডেট এক্সপায়ার্ড শ‍্যাম্পু আর চুল দিয়ে ঘর মোছা জারি আছে। অন্য মেয়ের সাথে সম্পর্ক চলে তার। আজও সন্তানের মুখ দেখলাম না। তবে এখন অনেক চুল পড়া শুরু হয়েছে। চুলে আর আগের লাবণ্য নেই। তবে এখন কি মানাতে পারবো তাদের।
বাবার বাড়ি যাবার পর মা এসেছি দেখেই আগে আমার খোঁপা খুলে দেখলেন— বাহ! এখনো কি সুন্দর আমার মেয়ের চুল। আমার মুখে হতাশার ছাপ দেখে হয়ত মায়ের মুখের হাসিও ম্লান হয়ে গেল।
তার পরের দিন স্বামী মদ্যপ অবস্থায় বাসায় এসে আমার মোটা বেণী দিয়ে গলায় ফাঁস দিয়ে বলছিল:– দেখি তোর এই চুল আজকে কিভাবে থাকে! আমার দম বন্ধ হয়ে আসছিল আর চোখ দিয়ে পানি বেয়ে পড়ছিল।
নাহ! এসব আর কতকাল সহ্য করব! ভেবে ভেবে রান্নাঘরে কাঁদছিলাম তখন চোখ গেল চুলায় ফুটন্ত গরম পানির দিকে। তাকিয়ে রইলাম সেদিকে। এরপর খোপার কলম আর পিন গুলো খুললাম আর সমস্ত চুল ফুটন্ত পানিতে ডুবালাম আর ভাবতে থাকলাম সেই দিনগুলির কথা। সেই মাঠে একসঙ্গে খেলা, জুনিয়র বৃত্তি পরিক্ষার পরীক্ষকের সেই নোংরামি সব স্মৃতিগুলি ফুটন্ত পানিতে ভেসে আসছিল তাই চেয়েই থাকলাম সেই দিকে।
ম্যাডাম কতটুকু কাটব? আপনার চুল মারাত্মক ড্যামেজড কিন্তু চুলের ঘনত্ব, লেংথ, শাইন সবকিছুই সুন্দর। আমি বললাম- কাটতে থাকুন যতক্ষণ না এই সব চুল শেষ হয়ে যায় এই সব কস্টের মূল শেষ হয়ে যায়! "
–ওকে ম্যাম তাহলে আপনাকে বয়কাট দেই কারন মাথার কাছের চুলগুলো একটুও ড্যামেজ হয়নি; খুব সুন্দর দেখতে।
বয়কাট দেয়ার পর কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকলাম এরপর মাটিতে পড়ে থাকা চুলের সমুদ্রের দিকে তাকালাম। তারপর হঠাৎ আয়নার দিকে তাকিয়ে বললাম ‘‘এবার মাথা পুরো ন্যাড়া করে দিন আর মেডিসিন দিয়ে দিন যেন আর চুল না গজায়।’’

আজ হয়ত বড় আপুরা নেই যে বলবে চুলগুলি ফেলে না দিয়ে তাদের দিয়ে দিতে। আজ হয়ত সেই স্যারও নেই যে এই চুল কাটতে দেখে মায়া লাগবে। 

[সংগৃহীত]

গ্রামীণ নাপিত~আনন্দ (শেষার্ধ)

"আহা…ঠিক আছে…" তিনি বললেন যখন আমি তার বাক্সের দিকে অনুসন্ধানের দৃষ্টিতে তাকালাম তার কাছে কোন ধরনের রেজার আছে তা দেখতে। সৌভাগ্যবশত ...