Sunday, May 5, 2019

অপরাধ-১

কলেজ ক্যাম্পাসে পা রাখতেই কেমন যেন কান্না পেয়ে গেল শ্রেয়ার। নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবার থেকে চরাই উতরাই পার হয়ে কলেজে ভর্তি হওয়াটা ছিল তার জন্য স্বপ্নের মত। যেবার বাবাকে সাথে নিয়ে কলেজ ভর্তির ফর্ম নিতে আসল তখন তার বাবা তাকে বলেছিল "মা, আজ তোর স্বপ্ন পূরণের দিন। ভাল করে মন দিয়ে পড়াশোনা করবি। যাতে তোর গরীব বাপ মার মত জীবনে সব সময় কষ্টে কাটাতে না হয়।" 


বাবার কথাগুলো মনে পড়তে থাকল শ্রেয়ার প্রতিটি পদে পদে। উচ্চ মাধ্যমিকে লেটার মার্কস পেয়ে কলেজে ভর্তির সুযোগ যেন সোনার মুকুট ছিল তার কাছে। এত এত ব্রিলিয়ান্ট স্টুডেন্টদের মাঝে বসে নামকরা কলেজে পদার্থবিদ্যার সারথী হতে যাচ্ছে সে। 

প্রথম দিনেই পরিচয় হল মিতা, অনিক, সিমলা, আকাশের সাথে। তারা এখানকার লোকাল; যদিও বিভিন্ন স্কুল কলেজে পড়া ছেলেমেয়ে। 


প্রথমদিনে কোথায় ক্লাস, কেমন স্যার ইত্যাদি নিয়ে ঘোর হতে লাগল তার।

তবে সে একটা জিনিস খেয়াল করল, সবাই অনেক মডার্ণ টাইপের। মেয়েরা জিন্স টপস পরে আসছে, ববকাট লেয়ার কাটের চুল। তাদের তুলনায় শ্রেয়ার নিজেকে গেয়ো মনে হল। সালোয়ার কামিজ পরা কোমর অবধি বেয়ে চলা লম্বা চুলের সুকেশিনী সে। বেণী করে ক্লাসে গিয়ে এমন কোন মানুষ নেই যে তাকে তার চুল নিয়ে কিছু বলে নি। অনিক তো বেণীটা ধরে বলেই ফেলল, "কিরে এই দড়িটা কোত্থেকে বয়ে আনলি" । শ্রেয়া বুঝল এখানে সবাই অনেক ফ্রি। 



সে বলে " আমার খুব প্রিয় এটা, দড়ি বলিস আর যাই বলিস এমন র‍্যাপাঞ্জেল পাবি নাকি"! 

সঙ্গে সঙ্গে হো হো করে হেসে উঠল বন্ধুরা। 


বাবা মায়ের একমাত্র ছেলে অনিক। একমাত্র ছেলে হওয়ায় পাড়ার বন্ধু ছাড়া তেমন মেলামেশার কেউ ছিল না। বাবা মা দুজনেই চাকরি করেন। সেই সুবাদে নিজের বাড়ি যেন নিজের জগৎ তার। ছোটবেলা থেকে দেখে রাখার জন্য বাবার এক পিসতুতো বোন ছিলেন। যদিও সেই পিসিমা গত হয়েছেন তা সেই মাধ্যমিকের আগেই। ততদিনে ছেলে বড় হওয়ায় নিজের মত থাকতে দেন মি আর মিসেস রায়।


উচ্চ মাধ্যমিকে পড়ার সময় থেকেই জীববিদ্যার প্রতি আলাদা ঝোক ছিল অনিকের। কলেজে গ্রাজুয়েশন করতে এই বিষয়কেই বেছে নিল সে। পড়াশোনা খুব করত তা নয়; তবে নার্ড টাইপের ছিল সে। মুভি, গেমস, কমিকস নিয়েই বেশি পড়ে থাকত। তাছাড়া বন্ধুরা অনেকেই অন্য দিকে চলে গেছে যেমন কেউ ইঞ্জিনিয়ারিং, কেউ মেডিকেল, কেউ আর্মিতে। তবে অনিক আগে থেকেই বেসিক সাবজেক্টে পড়তে চাইত। 


তাই কলেজে পুরোনো স্কুল কলেজের বন্ধুদের তেমন কেউ ছিল না। তবে ছোটবেলার বান্ধবী মিতা একই কলেজে ভর্তি হয়। মিতা ছিল গার্লস স্কুলে আর অনিক বয়েজে তবু একই পাড়ার আর একই ক্লাসের হওয়ায় চেনাজানা ছিল। তবে নতুন কলেজে একইসাথে হওয়ায় বন্ধুত্বটা যেন নতুন মাত্রা পেল। আর অনিকের নতুন রুমমেট আকাশ। শহুরে ছেলে কম্পিউটার আর গিটার নিয়ে যার দিন কেটে যায়। মিতা পদার্থবিদ্যায় চান্স পাওয়ায় একসাথে তেমন থাকা হয় না অনিকের, যতটা না ক্লাসমেট সিমলা থাকে কাছে। প্রথমদিনেই যেমন পরিচয় তার সাথে; নতুন কলেজে আসা, কি বই পড়তে হবে, কোন স্যার কেমন, ফিউচার প্লান হাবিজাবি।


ওরা চারজন মোটামুটি প্রথম দিন থেকেই একটা সার্কেলের মত। তবে সেদিন মিতার ক্লাসমেট শ্রেয়া মেয়েটাকে দেখে অনিকের কেমন যেন অন্যরকম  লাগে। শহুরে মেয়ে চিকন চাকন ফর্সা চেহারার সাথে সুন্দর লম্বা কোমর অব্ধি চুল। অনিকের আগে থেকেই মেয়েদের চুলের প্রতি বিশেষ এক আকর্ষণ আছে। শ্রেয়াকে দেখেই প্রথম চোখটা চুলের দিকেই গেছিল। সে তখন থেকেই চাইত শ্রেয়ার চুলটা কিভাবে সে কাছে পেতে পারে। 


প্রথম দিন ক্লাস শেষে হোস্টেলে উঠতে একটু বেগ পেতে হল। বাবা এসে সব কিছু কিনে টিনে দিলেও সব গোছগাছ একারই করতে হল শ্রেয়ার। নতুন রুম সাথে নতুন রুমমেট সাথে আরেক নতুন সংসার। বেড ফেলেছে জানালার কাছে। সাথে পড়ার টেবিল, একটা আলনা আরেকটা ছোট ওয়ারড্রব। পাশেই উঠেছে মিতা। শুরু থেকেই যেন আপন বোন পেয়ে গেছে মিতাকে। আরেক রুমমেট তিশা। তিনজনে ভাল করে গুছিয়ে নিল নতুন রুম। ফার্স্ট ইয়ারেই এমন রুম পাওয়া ভাগ্যের যদি না ফাইনাল ইয়ারের নেত্রী দিদির সাথে মিতার যোগাযোগ না থাকত। অবশ্য সেই আপুর কাছেই প্রাইভেট পড়ে চান্স মিলেছে মিতার। 


নতুন রুম গুছিয়ে ধুলো ময়লায় একশা হয়ে টায়ার্ড হয়ে গিয়েছিল শ্রেয়া। ভাবছিল স্নান করা দরকার। হোস্টেলে পাবলিক বাথরুম যেয়ে সিরিয়াল দিয়ে আসল সে। বেণীটা খুলতে খুলতে তেল দিতে গেল রুমে। খোলা চুলে দেখে মিতা তাকে জড়িয়ে বলল "বাহ, শ্রেয়া এত সুন্দর চুল তোর, কিভাবে বানালি বল না।" শ্রেয়া বলে "আর কই সুন্দর, আমার চুল মায়ের মত, ছোটবেলা থেকেই লম্বা চুলে অভ্যস্ত করে দিয়েছে মা। মা-ই কেয়ার নিত বেশি চুলে। নিয়ম করে নারিকেল তেল, মেথির তেল, অ্যালোভেরা, ডিম দিয়ে বসিয়ে রাখত। বলত, এগুলা নিয়মিত করলে চুল সুন্দর হয়।" মিতা বলে  "আসলেই তোর চুল অনেক সুন্দর রে। কি সুন্দর সিল্কি, স্ট্রেইট, ঢেউ খেলানো, যত্ন করিস বলেই এত লম্বা হয়েছে।" প্রশ্ন করল "কাটিস নি কখনো?" 


"কেটেছি তো, ছোটবেলায় ঘাড়ের নিচ পর্যন্ত রাখতাম। মা আমাকে দুই বছর অন্তর অন্তর ন্যাড়া করে দিত। ক্লাস সেভেনে যখন পড়ি তখন মা ন্যাড়া করার সময় বলেছিলাম মা বড় হয়ে যাচ্ছি, আর কত এভাবে চুলগুলো কেটে দিবে!! মা বলেছিল এতে তোর চুল বাড়বে। ঠিক আছে এরপর আর করব না আমার মেয়েটা তো বড় হচ্ছে।" "এরপর আর কাটিনি। কাটিনি বলতে ডগা ছেঁটেছিলাম কিন্তু চুল তখন থেকেই বাড়ন্ত।" 


মিতা বলল "ভাল করেছিস। এখন তোর চুল কত মোটা, বেণী করলে কত মোটা দেখায়। স্ক্রু গজ দিয়ে তোর চুল কত মোটা মাপব। আর খোঁপা করে রাখলে তো আস্ত একটা ফুটবল।" বলেই হাসতে থাকল তারা। "মাঝে মাঝে একটু খেলতে দিস তোর চুল নিয়ে।” 


শ্রেয়া বলে "খেলবিই তো, আমার দাদা তো কিছু হলেই ওরে ছুটকি বলে চুলেই টান দেয়, মায়ের যত্ন আর দাদার টানাটানিতেই লম্বা হয়ে গেছে চুল।" 


"তোর চুলও সুন্দর"। মিতা বলে  "না রে, দেখ না কেমন চিট্টি হয়ে আছে, যত্ন করি শ্যাম্পু দেই নিয়মিত কিন্তু তাও দেখ কেমন আঁকাবাঁকা হয়ে থাকে। তাই লেংথ বেশি করি না যদি চুল পড়ে যায়।" 


শ্রেয়া চুলে নারিকেল তেল দেয়। ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে এপাশ ওপাশ করে, পিছনের চুলগুলা সামনে এনে হাতের কোমল ছোঁয়াতে চুলগুলোকে বুলিয়ে দিচ্ছে পরম যত্নে। তেলের আভায় চকচক করছে যেন মাথা ভর্তি ব্লাক ডায়মন্ড। খোঁপা করে নিল। যেন ছোটখাট একটা বল বসিয়ে নিল মাথায়। স্নানে গিয়ে শ্যাম্পু দিবে সে। 

(চলবে…)

No comments:

গ্রামীণ নাপিত~আনন্দ (শেষার্ধ)

"আহা…ঠিক আছে…" তিনি বললেন যখন আমি তার বাক্সের দিকে অনুসন্ধানের দৃষ্টিতে তাকালাম তার কাছে কোন ধরনের রেজার আছে তা দেখতে। সৌভাগ্যবশত ...