Wednesday, May 8, 2019

অপরাধ-২

ওরা চারজন মোটামুটি প্রথম দিন থেকেই একটা সার্কেলের মত। তবে সেদিন মিতার ক্লাসমেট শ্রেয়া মেয়েটাকে দেখে অনিকের কেমন যেন অন্যরকম  লাগে। মফস্বলের মেয়ে চিকন চাকন ফর্সা চেহারার সাথে সুন্দর লম্বা কোমর অব্ধি চুল। অনিকের আগে থেকেই মেয়েদের চুলের প্রতি বিশেষ এক আকর্ষণ আছে। শ্রেয়াকে দেখেই প্রথম চোখটা চুলের দিকেই গেছিল। 


যখন ছোট ছিল অনিক তখন থেকেই মেয়েদের লম্বা চুল দেখতে পছন্দ করত। ছেলে বলে লম্বা চুল রাখতে পারে না তাতে যে তার কি আফসোস! স্কুলে ক্লাসে লম্বা চুল রাখার জন্য তো একবার স্যার তাকে পিটিয়েছিল। তখন তার মনে হত মেয়েদের লম্বা চুল রাখার জন্য স্যাররা কেন তাদের পিটায় না!! বাবাও তাকে বকত লম্বা চুল রাখলে। কিন্তু মেয়েদের দেখলে খুব ইচ্ছে করে কানের উপর দিয়ে বেয়ে যাওয়া চুল আঙুল দিয়ে কানের ভাজে গুজে দিতে। লম্বা চুলের সিথি যখন বাঁ পাশ থেকে ডান পাশে নিয়ে আনে কোথায় যেন এক বিদ্যুৎ খেলে যায় তার শরীরে। আর কারোর বাতাসে উড়তে থাকা ঢেউ খেলানো চুল তো পাগল করে দেয় তাকে। তার মা যখন আয়নার সামনে চুল আচড়াত তখন অপলক চেয়ে থাকত তার দিকে। একবার ক্লাস ফাইভে থাকতে তার কাজিন অপলা দিদির পাশে বসিয়ে গাড়িতে করে গ্রামে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল অনিককে। অপলার চুলগুলো বাতাসে উড়ে অনিকের মুখে পড়ছিল। খুব উপভোগ করেছিল সে। বাধা দেয় নি। মুখের ভিতরে চুল ঢুকে গেলেও কিছু বলে নি। সেবার হাতের কাছে কাচি পাওয়ায় দিদির একগাছি চুল ধরে গোড়া থেকে কেটে দিয়েছিল সে। চুলগুলো কেটে নাকের কাছে ধরতেই যেন অপার্থিব এক আনন্দ পেয়েছিল। তাতে অবশ্য ক্ষতি বৈ কোন লাভ হয়নি। বরং খাবলা করে কেটে দেয়ায় নাপিত পিঠ পরিমাণ চুলকে বয়কাট করেও কোনভাবে সাইজ না করতে পেরে অপলাদিকে ন্যাড়াই করে দিয়েছিল। তাতে নাপিতের ডবল লাভ হল; কেননা চুল কাটার অপরাধে মি রায় অনিককেও জোর করে ন্যাড়া করে দিয়েছিলেন। সেই থেকে অপলাদি তার কাছে ঘেঁষে নি। তারপরে মাধ্যমিকের সময় কাজের যে মেয়ে ছিল তাকে একবার ঘুমের সময় ব্লেড দিয়ে মাথার মাঝ বরাবর সুন্দর করে চেঁছে দিয়েছিল অনিক। সেবার তাকে আবার ন্যাড়া করা হয়নি যদিও কিন্তু অনেক বকাঝকার পর বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছিল তার বাবা। পরে বন্ধুর বাড়ি গিয়ে মিসেস রায় অনেক বুঝিয়ে সুঝিয়ে বাড়িতে এনেছিল অনিককে। তারপর থেকে লম্বা চুলের মেইড রাখেনি তারা।


অবশ্য অনিক এখন বড় হয়েছে। তারপরও সেই অভ্যাস আজও যায়নি। মেয়েদের চুলে যে কি মাদকতা থাকতে পারে অনিক সেটা বুঝে নিয়েছিল। প্রতিনিয়ত ফেসবুকে হেয়ার ফেটিশের গল্প পড়ে, তিরুমালার মহিলাদের ন্যাড়া হওয়ার ভিডিও দেখে, বিভিন্ন ওয়েবসাইটে মেয়েদের ন্যাড়া মাথা আর কেটে ফেলা চুল দেখে যেন এক অন্য রকম আনন্দ পেত সে।


নতুন কলেজে অনেক মেয়েরাই পড়তে এসেছে। অনিক মেয়েদের দেখত, তবে চেহারা নয় চুল। প্রথম চোখটা যেত চুলের দিকে। লম্বা চুলের মেয়ে হলে তো কথাই নেই যেন চাঁদ পেয়ে গেছে সে। তবে এখনকার মেয়েরা বেশি ঢঙ করতে গিয়ে চুল কাটে যেটা তার বিরক্ত লাগে। তার সার্কেলের মেয়েরাও এমন ভ্যারাইটির। মিতার চুল পিঠের মাঝ বরাবর; কোঁকড়া, বেধে পনিটেইল করলে উপর থেকে চুল উঠে থাকে। সিমলার চুল ভাল ; স্ট্রেইট তবে ববকাট। তবে শ্রেয়ার চুল অসাধারণ; মনে হয় যেন এক সাগর চুল দিয়ে মাথাটাকে মুড়িয়ে রেখেছে। এত সুন্দর শাইনি, সিল্কি, স্ট্রেইট, জমকালো চুল তাকে যেন এক নতুন মাদকতায় আকর্ষণ করে। সেদিনই সে চুল ধরার লোভ সইতে না পেরে শ্রেয়ার বেণীটা ধরে বলেই ফেলেছিল "কিরে এই দড়িটা কোত্থেকে বয়ে আনলি"। 



ধরার সাথে সাথে একটা বিদ্যুৎ চট করে শিরদাড়া বেয়ে নেমে গেছিল তার। 


হোস্টেল জীবন আর নতুন পড়াশোনা নিয়ে ভালই চলছিল শ্রেয়ার। কলেজের পড়াশোনা তার কাছে ভালই লাগে। পড়ার ফাকে আড্ডা, বন্ধুদের সাথে শপিং, মুভিতে যাওয়া, বিকেলে নদীর পাড়ে ওরা পাঁচটা মিলে আকাশের গানের আসরো মাদকতায় হারানো আর মেয়েরা মিলে অনাগত বয়ফ্রেন্ড নিয়ে আলোচনা যেন রঙিন করে দিয়েছিল দিনগুলো।


সেমিস্টার পরীক্ষা শেষে বাড়ি যাওয়া, বাবা মা দাদা আর ছোট বোনের সংসারে সেই মেজদিদি হয়ে থাকাটাও সে এখনও উপভোগ করে। দাদা বিকম করে সরকারি চাকরি খুজছে। বাবার বয়স হয়েছে প্রাইভেট ফার্মে ম্যানেজার হয়েও পদোন্নতি বেশিদূর হয়নি। মা গৃহিণী। তাই এতদিনে দুটো টিউশনি করে নিজের হাতখরচ চালিয়ে নিত। তবুও পরীক্ষা বা যে কোন প্রয়োজনে বাবা টাকা দিয়ে দিত অকপটে।


কলেজের মেয়েদের দেখে একটু ফ্যাশন শিখেছে সে। সে এখন জিন্স পরে, টপস পরে। বিকিনি পরে মেয়েরা মিলে নাচানাচি করে। একবার বন্ধুদের পার্টিতে গিয়ে নেচেছে সে। কিন্তু চুল তার আগের মতই আছে। কোমর বেয়ে পশ্চাৎদেশের মাঝ বরাবর হয়ে গেছে ছয় মাসেই। সেবার পার্টিতে সবাই মিলে গান করেছিল আকাশের সাথে। গিয়েছিল শহর থেকে দূরে এক পুরোনো বাঙলোতে। বার বি কিউ, গিটার, সাউন্ডবক্স নিয়ে মেতে উঠছিল উদ্দাম আনন্দে। ছেলেরা একটু নেশাকেতা করছিল সিগারেট আর রাম নিয়ে। সিমলাও যে ধোঁয়া নিতে পারে তা জানা ছিল না কারও। তবে শ্রেয়া এগুলো ছুঁয়ে দেখে নি। তবে নাচতে গিয়ে খোঁপা করে কাঁটা দিয়ে বাঁধা চুলগুলো খুলে গিয়েছিল তার। এত সুন্দর চুল দেখে সবাই থমকে গিয়ে যেন শ্রেয়াকেই দেখছিল।


শ্রেয়া খেয়াল করল অনিক খুব গা ঘেঁষতে চাইছে। এমনিতে ছেলেটা ভাল। খুব মিশুক, পরোপকারী, ব্রিলিয়ান্ট এক ছাত্র কিন্তু প্রথম দিনেই চুলের বেণী খপ করে ধরায় শ্রেয়া কেন যেন দূরে দূরে থাকে। তারপর অবশ্য অনিকের সাথে মিশতে মিশতে ক্লোজ হয়ে গেছে। যদিও অন্য ডিপার্টমেন্টের তবু ভাল বন্ধুত্ব তাদের। অনিক এসে তার চুলে হাত বুলিয়ে দিল। মিতা বলল "সামলে অনিক, বেশি খেয়ে ফেললি নাকি"। অনিক বলল "আরে ধুর, কি যা তা বলছিস, শ্রেয়ার চুল সুন্দর তাই একটু ধরলাম। কেন ধরলে কি কেস করে দিবি নাকি?" শ্রেয়া বলল "আমার চুল সুন্দরই আর এটা আমার বরের জন্য তাই অন্য কেউ হাত দিক তা আমি চাই না অনিক" 


থতমত খেয়ে অনিক হাত ছেড়ে দিল। কিন্তু শ্রেয়ার মনে হল অনিক ওর চুলের দিকেই বারবার তাকাচ্ছে। সে নাচ বাদ দিয়ে সাইডে গিয়ে চুলে ক্লিপ পরিয়ে দিল। মিতা এসে জোর করল " কিরে আপসেট!! আরে অনিক এমনই তুই তো জানিসই, এতদিন মিশেছিস।" 


"হ্যাঁ আমি জানি, অনিক ছেলে ভাল, বন্ধু হিসাবে হাত ধরাই যায় কিন্তু আমার চুল আমি কাউকে ধরতে দিব না।" 


শ্রেয়ার অনেক যত্নে গড়া এই চুল। সবার আকর্ষণের মধ্যমণি, ওর রূপের প্রধান উপকরণ, ওর অ্যাটেনশন, ওর ভাললাগা হচ্ছে ঢেউ খেলানো পিঠ বেয়ে বয়ে চলা চুলের এই সমুদ্র। এটা তার সম্পদ। 


দিন দিন শ্রেয়ার প্রতি দুর্বল হতে লাগল অনিক। তার এখন চিন্তা ভাবনায় শুধুই শ্রেয়া। কলেজের শুরু থেকে শ্রেয়াকে দেখার পর থেকে ওকে ভাল লাগে, বলা যায় চুলের জন্যই। ওই চুলের জন্যই ভাব জমানোর চেষ্টা করে সে। কল্পনায় শুধু শ্রেয়ার চুলগুলো হাত বুলিয়ে দিচ্ছে, হাত নিয়ে সারা গায়ে মাখছে, খেলা করছে চুল নিয়ে, গোড়া থেকে ক্ষুর দিয়ে চেঁছে সাদা চাতাল বের করে দিচ্ছে এসবই চিন্তা করে সে। যদি কখনও চুলগুলো হাতে পায় তাহলে সে সেগুলো নিজের করে নিবে। ইউটিউবের চাইনিজ মেয়েগুলোর মত সুন্দর মসৃণ চুল যখন তার সামনে দিয়ে ঘোরে তখন সে কিছুতেই না তাকিয়ে থাকতে পারে না। 


(চলবে…)

No comments:

গ্রামীণ নাপিত~আনন্দ (শেষার্ধ)

"আহা…ঠিক আছে…" তিনি বললেন যখন আমি তার বাক্সের দিকে অনুসন্ধানের দৃষ্টিতে তাকালাম তার কাছে কোন ধরনের রেজার আছে তা দেখতে। সৌভাগ্যবশত ...