চুলে বয়কাট করে রাখতো। অনেক সময় এমনকি জেনিলিয়া প্রীতিকে তার চুলের জন্য প্রশংসা করতো এবং কিছু সময় মজা করার জন্য প্রীতিকে তার চুল কাটতে বলতো কিন্তু প্রীতি সবসময় বলতো সে তার চুল লম্বা রাখতেই পছন্দ করেছে এবং তারা এটা শুনে আমোদ পেতো।
যাই হোক প্রীতি একটি নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারে তার বাবা-মায়ের একমাত্র সন্তান ছিল তাই তার পরিবারের আর্থিক সহায়তার জন্য তাকে চাকরি করতে হচ্ছিল; এখন সে বিবাহযোগ্যা হওয়ায় তার মা তার বিয়ের জন্য ভাল পাত্র সন্ধান করছিলেন কিন্তু পাচ্ছিলেন না। তারা খুব ঐতিহ্যবাহী পরিবার তাই বংশমর্যাদার মিলও প্রয়োজন ছিল এবং যদি তা মিলেও যেত তবে পাত্রের পরিবার যৌতুক দাবি করতো। তাই প্রীতির পরিবার তার বিয়ের ব্যপারে এগুতে পারছিল না।
একদিন প্রীতির জন্য চৌধুরী পরিবার নামে সুপরিচিত এক ধনী পরিবারের পক্ষ থেকে একটি বিয়ের প্রস্তাব এসেছিল এবং তার বিয়ের জন্য কোনো প্রকার যৌতুক দাবি করবেনা শর্ত দেয়। তাই প্রীতির বাবা পাত্রপক্ষকে প্রীতিকে দেখতে তাদের বাড়িতে আসার আমন্ত্রণ জানান। এবং উভয়পক্ষের সম্মতিতে একটি ছুটির দিন ধার্য করেন।
সেদিন প্রীতি খুব তাড়াতাড়ি উঠে স্নান করল আর মা তার লম্বা চুলে খোঁপা বেঁধে দিলেন ও তাকে বললেন যে আজ খুব বড় ধনী পরিবার তোমাকে দেখতে আসছে; তাদের যদি তোমাকে দেখে পছন্দ হয় তাহলে বলতে হয় তুমি খুব ভাগ্যবতী।
তারপর ডোর বেল বেজে উঠল আর প্রীতিকে তার রুমে রেখে প্রীতির মা সামনের রুমে গিয়ে দরজা খুললেন এবং পাত্রের পরিবার ভিতরে প্রবেশ করল ও প্রীতির বাবা-মায়ের সাথে বিয়ের ব্যাপারে আলোচনা আরম্ভ করল। অতঃপর প্রীতির মা তাকে রান্নাঘর থেকে অতিথিদের জন্য চা-কফি এবং জলখাবার আনতে ডাকলেন। প্রীতির খুব লজ্জা করছিল এবং যথাসম্ভব সেই অভিব্যক্তি গোপন করে সে পাত্রপক্ষের সামনে টি-টেবিলের উপর ট্রে-তে করে চা-নাস্তা সার্ভ করে তার মায়ের পাশে সোফায় বসল। ধীরে ধীরে সে চোখ তুলে তাকিয়ে দেখলো যে মোট পাঁচ জন আগন্তুক তার সামনের সোফাগুলিতে বসা রয়েছেন। সবার মাঝখানে একজন হ্যান্ডসাম পুরুষ বসা ছিলেন যাকে সে তার হবু স্বামী বলে ধারণা করে এবং সে তার বাবা-মা, বড় ভাই এবং বৌদিকে নিয়ে এসেছিল; সে তার হবু বরের সাথে আসা স্ত্রীলোকদের মধ্যে অদ্ভুত কিছু লক্ষ্য করেছিল। তার হবু শাশুড়ি এবং তার হবু জা দুজনের চুলই ছেলেদের মত ছোট করে ছাঁটা। তবে তার লজ্জা কাটাতে পারছিল না বলে কিছু জিজ্ঞেস করল না। সবশেষে কথা পাকা করার পর প্রীতির হবু শ্বশুর তাকে জিজ্ঞেস করলেন, সে তাদের পারিবারিক ব্যবসায়ে যোগ দিতে আগ্রহী কিনা এবং কোম্পানির হিসাব বিভাগ পরিচালনা করতে রাজি কিনা? প্রীতি বলল সে রাজি আছে। ঠিক তখনি শাশুড়ি বলল, বেশ তবে আমাদের পক্ষ থেকে একটি শর্ত আছে- "যেহেতু আমরা কারখানার মালিক তাই আমাদের সর্বদা শ্রমিকদের থেকে আলাদা দেখানো উচিত এবং একবার যখন আমি আমার চুল ছোট করলাম তখন আমাদের ব্যবসায়ের বেশ উন্নতি ঘটল সেই তখন থেকে আমাদের পরিবার এটি আমাদের জন্য সৌভাগ্যচিহ্ন বলে বিশ্বাস করে; সেজন্য আমার বড় ছেলের বৌও বিয়ের পরে চুল ছোট করে ফেলেছে। অতএব আমি মনে করি তোমারও বিয়ের আগে চুল কেটে ফেলা উচিৎ।" এই কথা শুনে প্রীতি অবাক হলেও মুখ ফুটে কিছু বলল না এবং বরের পরিবাররা তাদের বাড়ি থেকে বেরিয়ে গেল।
প্রীতি মা খুব খুশি ছিল তবে প্রীতি ছিল না কারণ চুল কাটার শর্ত মেনে নিতে তার আপত্তি ছিল। দুজনের মধ্যে কিছু তর্ক হলো। প্রীতিকে তার মা বলেছিল যে এতদিনে তার বিয়ের জন্য একটি উপযুক্ত প্রস্তাব এসেছে এবং পাকা কথাও হয়ে গেছে সুতরাং তার সব শর্ত মেনে নেওয়া উচিত। কিন্তু প্রীতি মন থেকে মানতে পারছিল না তাই প্রীতি তার মায়ের কাছ থেকে কিছুদিন সময় চাইলো তার সিদ্ধান্ত জানানোর জন্য।
কিছুদিন পর প্রীতি যখন পায়ে হেঁটে স্কুলে যাচ্ছিল তখন তার সামনে একটি বড় গাড়ি এসে থামল এবং গাড়ির জানালা দিয়ে মাথা বের করে একজন মহিলা তাকে নাম ধরে ডাকলেন। প্রথমে প্রীতি তাকে ঠিক চিনে উঠতে পারেনি তবে পরে সেই মহিলা তাকে তার পরিচয় খুলে বললে সে চিনতে পারে যে সে মহিলা হচ্ছে শায়লা, চৌধুরী পরিবারের বড় বৌ মানে তার হবু জা। সেদিন যখন প্রীতির শ্বশুর-শাশুড়ি তাকে দেখতে ও বিয়ের কথা পাকা করতে তার বাড়িতে এসেছিলেন সেদিন তিনিও গিয়েছিলেন। শায়লা প্রীতিকে তার গাড়ীতে উঠে বসতে বলল তবে প্রীতি প্রথমে না বললেও পরে তার অনুরোধ ফেলতে না পেরে গাড়ির ভিতরে ঢুকে বসলো। তারপর শায়লার ইশারাতে গাড়ি চলতে শুরু করলো। সে লক্ষ্য করলো তার একজন ড্রাইভার ছিল। শায়লা প্রীতিকে জিজ্ঞাসা করল- সে কোথায় যাচ্ছে? আর সে উত্তর দিলো স্কুলে বাচ্চাদের ক্লাস নিতে। শীঘ্রই তারা অন্তরঙ্গ কথোপকথন শুরু করে দিলো এবং শায়লা কথায় কথায় জানালো যে সে তার এই আরামদায়ক স্বাচ্ছন্দ্যময় জীবন নিয়ে খুব খুশি। সে এই মুহূর্তে তার ড্রাইভার সহ নিজের গাড়িতে চড়ে শপিং করতে যাচ্ছে।
তখন হঠাৎ শায়লা প্রীতিকে বলল শপিং মলের কাছে আমার পরিচিত বিউটি পার্লার আছে; আমি সেখানে যাচ্ছি আমার চুল ছাঁটাতে; চাইলে তুমিও আমার সাথে যেতে পারো। তাহলে আমি সেই বিউটিশিয়ানের সাথে তোমার পরিচয় করিয়ে দেবো। প্রীতি কিছুটা রাগতস্বরে বলল ‘সে আগ্রহী নয়’। শায়লা বলল, ওকে 'নো প্রবলেম ডিয়ার’ এবং তাকে বলল যে বিয়ের আগে তারও প্রীতির মতই লম্বা চুল ছিল এবং চুল কাটার কথা শুনলে লজ্জা পেতো। কিন্তু বিয়ের পরে এখন সে তার জীবনের সমস্ত স্বাচ্ছন্দ্যে খুশী; তখন প্রীতি নিজের জীবন নিয়ে ভাবতে শুরু করল কিন্তু হঠাৎ তার স্কুলের দালান চোখে পড়লো। সে শায়লাকে গাড়ি থামাতে বলে ও শায়লা ড্রাইভারকে থামতে বলল এবং সে গাড়ি থেকে নেমে হাত নেড়ে শায়লাকে বিদায় জানালো। যখন সে তার স্কুলে প্রবেশ করতে যাচ্ছিল তখন তার সহকর্মী বন্ধু জেনিলিয়াও সেখানে ছিল এবং সামনে এগিয়ে তার দু হাত নিজের হাতে নিয়ে মৃদু হেসে বলল, “ওয়াও, প্রীতি! ইউ আর সো লাকি। আজকাল তুমি গাড়িতে যাতায়াত করা শুরু করেছো।"
সে রাতে প্রীতি কি করবে তা নিয়ে ভাবতে থাকলো এবং অবশেষে সকালে তার মাকে জানালো যে সে চৌধুরী পরিবারের শর্ত মানতে রাজি আছে। প্রীতির মা হাসিমুখ করে তাকে বলল যে ছোট চুলেও তোমাকে দারুণ মানাবে।
তার শাশুড়ি বলেছিলেন যে, ‘বিয়ের আগেই তার চুল কাটাতে হবে’; প্রীতি তার বিয়ে পর্যন্ত লম্বা চুল রাখতে চেয়েছিল বলে তার খানিকটা মন খারাপ ছিল। তবে সে আর এ নিয়ে অমত করল না।
এর পরদিন সকালে শায়লা এসে প্রীতিকে বিউটি পার্লারে নিয়ে গেল। সেখানে সে বিউটিশিয়ানকে কানে কানে কিছু কথা বলল এবং প্রীতির সাথে তাকে পরিচয় করিয়ে দিলো। বিউটিশিয়ান প্রীতির দিকে তাকিয়ে মিষ্টি হাসি দিয়ে তাকে স্বাগত জানালো। এরপর তিনি প্রীতিকে চেয়ারে বসিয়ে লম্বা এক ফালি কাপড় দিয়ে তার সামনের আয়নাটা ঢেকে দিয়ে বললেন যে চুল কাটা শেষ হবার পরই প্রীতি আয়নায় নিজের মুখ দেখবে। প্রীতি নার্ভাস হয়ে শায়লার দিকে তাকালো আর এরই মধ্যে বিউটিশিয়ান তার চুলকে ঘাড়ের একটু নিচে পনিটেলে পরিণত করলেন এবং তাকে ঘাড় সোজা করতে বলে কাঁচি নিলেন। অতঃপর হঠাৎ প্রীতি তার ঘাড়ের পিছনে স্নিপ স্নিপ অনুভব করলো এবং দু'মিনিটের মধ্যে তার লম্বা চুলের গাছি বিউটিশিয়ানের হাতে চলে এলো। তখন তার চুল বব কাট হয়ে গেল। প্রীতি বিউটিশিয়ানকে জিজ্ঞেস করলো, তার চুল কাটা কি শেষ? বিউটিশিয়ান ও শায়লা দুজনেই হাসলো। এবং বিউটিশিয়ান মহিলাটি বলল এখনো আপনি বব কাট স্টাইলে আছেন তবে বয় কাট স্টাইল করা দরকার তাই এখন আমি আপনার চুল ধুয়ে নেবো। এই বলে প্রীতিকে ওয়াশ বেসিনের সামনে নিয়ে গেলেন এবং শ্যাম্পু দিয়ে ভাল করে চুল ম্যাসাজ করে ধুয়ে ফেললেন। এরপর আবার চুল স্তরে স্তরে সামনে পিছনে পাশ থেকে কাটতে লাগলেন। প্রীতি তার মাথার চারপাশে স্নিপ স্নিপ শব্দ শুনতে পাচ্ছিলো আর চিরুনির আঁচড় অনুভব করছিল; সেই সঙ্গে দেখে ছোট ছোট চুলের কুচি মেঝেতে ঝরে পড়ছে। কিছুক্ষণ পর বিউটিশিয়ান প্রীতিকে তার চুলের মধ্য দিয়ে নিজের আঙ্গুল চালাতে বললেন এবং চুলগুলো কতটা ছোট তা অনুভব করতে বললেন। প্রীতি বেশ নার্ভাস ফিল করছিল কিন্তু তবুও নিজের চুলে হাত ছোঁয়ালো ঠিক তখনি বিউটিশিয়ান আয়নায় উপর থেকে কাপড়টা সরিয়ে নিলেন আর প্রীতি নিজের চেহারা আয়নায় দেখতে পেল। প্রীতি বিশ্বাসই করতে পারছিল না যে আয়নায় এটা সে নিজের চেহারা দেখছে। তার চেহারা পুরো বদলে গিয়েছে। সে এখন বয়কাট স্টাইলে আছে। শায়লা তার কাঁধে হাত রেখে বলল- “ডোন্ট ওয়ারি ডিয়ার, ইউ উইল গেট অ্যাডজাস্টেড টু ইট।” এবার তারা বিউটি পার্লার ছেড়ে বেরিয়ে এলো এবং গাড়িতে বসতে বসতে শায়লা বলল যে এখন থেকে নিয়মিত ট্রিমিং করার জন্য দুজনেই একসাথে এখানে আসবে। তারপর তারা প্রথমে নিজের শ্বশুর বাড়িতে গেলো, যেখানে শাশুড়ি প্রীতিকে দেখে হাসিমুখ করে তার চুলের ছাঁট পছন্দ হওয়ার ইঙ্গিত দেন। এমনকি প্রীতির হবু স্বামীও তার দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসেন। তারপর শাশুড়ি তাকে উপহার স্বরূপ রত্নখচিত গয়না উপহার দিয়ে আশীর্বাদ করলেন।। প্রীতি উপহার পেয়ে বিস্মিত ও আনন্দিত হলো।
এরপরে প্রীতি স্কুলশিক্ষকতার চাকরি ছেড়ে দিলো এবং যথারীতি বিয়ের পিঁড়িতে বসলো। বিয়ে হয়ে যাবার পর সে পারিবারিক ব্যবসায়ের অফিসে হেড একাউন্টস অফিসার হিসেবে যোগদান করে। এখন সে সর্বদা বয়কাট স্টাইলে চুল রাখে এবং আস্তে আস্তে আধুনিক জীবনযাত্রায় অভ্যস্ত হয়ে উঠছে; সাথে সাথে এও বুঝতে পেরেছে যে ছোট চুল সামলানো অনেক সোজা।