Saturday, March 28, 2020

অপমানের প্রতিবাদ

মিঃ শরীফ একজন চাকরিজীবী। স্ত্রী ও এক মেয়ে নিয়ে তাদের একটি ছোট সুখী পরিবার। তার ১২ বছর বয়স্ক মেয়ে একটি গার্লস স্কুলে ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্রী। আর তিনি একটি প্রাইভেট কোম্পানিতে সহকারী ব্যবস্থাপক পদে কর্মরত আছেন। তার বাসা তার অফিসের নিকটে হওয়ায় প্রতিদিন দুপুরে লাঞ্চ ব্রেকে তিনি তার নিজের বাসায় দুপুরের খাবার খেতে আসেন। একদিন তিনি বাসায় খেতে আসলেন তবে কিছুটা রুক্ষ মেজাজ নিয়ে কারণ তার সহকর্মীদের সঙ্গে সেদিন তার বাকবিতণ্ডা হয়েছিল। সম্প্রতি তার অফিসে একজন সিনিয়র ব্যবস্থাপক অবসরে যাওয়ায় অফিসে ব্যবস্থাপকের একটি পদ খালি হয়। মিঃ শরীফসহ মোট ৮ জন সহকারী ব্যবস্থাপক সেই পদে পদোন্নতি পেতে প্রতিযোগিতা করছেন। প্রত্যেকেই চাইছেন তাকেই যেন পদোন্নয়ন করা হয়। সেদিন মিঃ শরীফের ডেস্ক থেকে একটি হিসাবের খাতা স্বাক্ষরিত হয়ে হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তার কাছে দেবার কথা ছিল কিন্তু তা ঠিক সময়ে হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তার টেবিলে না পৌঁছানোয় হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা একজন ব্যবস্থাপকের কাছে মিঃ শরীফের নামে নালিশ করেন। এই সুযোগে অন্য সব সহকারী ব্যবস্থাপক একযোগে মিঃ শরীফকে চেপে ধরে। মিঃ শরীফ সবার সঙ্গে তর্কাতর্কি করে মেজাজ গরম করে বাসায় আসেন।

মিঃশরীফ বাসায় এসেই খাবারের জন্য চিৎকার চেঁচামেচি শুরু করে দেন। তার স্ত্রী জলদি করতে গিয়ে থালাবাসন ফেলে দেন। মিঃ শরীফ তৈজসপত্র পড়বার আওয়াজ শুনে আরো ক্ষিপ্ত হন। তিনি তার স্ত্রীকে উদ্দেশ্য করে অশ্রাব্য ভাষায় গালাগাল দেন। তার স্ত্রী কোনো উত্তর না দিয়ে মিঃ শরীফকে খাবার বেড়ে দেন। মিঃ শরীফ তরকারি দিয়ে ভাত মেখে গোগ্রাসে গলাধঃকরণ করছেন হঠাৎ তার গলায় কি যেন পেঁচিয়ে গেল আর তিনি গিলে ফেলা ভাত উগড়ে দিলেন। মিঃ শরীফ উগড়ে ফেলা ভাত থেকে আঙ্গুল দিয়ে একটা লম্বা চুল বের করেন। তারপর তিনি তার স্ত্রীর দিকে পুনশ্চ অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করতে থাকেন। মিঃ শরীফের সঙ্গে তার একমাত্র মেয়েটিও খেতে বসেছিল। মেয়েটি মাথা নিচু করে সব শুনছিল। এদিকে মিঃ শরীফের মুখে গালাগাল শুনে তার স্ত্রী ভীষণ দু্ঃখ পেয়ে কেঁদে ফেললেন। মিঃ শরীফ একপর্যায়ে খাবার টেবিল ছেড়ে উঠে যান ও তার স্ত্রীর উদ্দেশ্যে বলেন “তোর ঐ চুল কাইটা ফেলাইস” এবং দরজা খুলে তা সজোরে টেনে বন্ধ করে বাসা থেকে বেরিয়ে যান। মিঃ শরীফের স্ত্রী মিঃ শরীফের উগড়ে দেয়া খাবার ও খাবারের থালা টেবিল থেকে সরিয়ে টেবিল পরিষ্কার করেন। তার চোখে তখনও পানি টলমল করছে। মিঃ শরীফের মেয়েও কোনমতে খাবার শেষ করে উঠে হাতমুখ ধুয়ে নিজের রুমে গিয়ে ভাতঘুম দেয়। বিকালে তার মা তাকে ডেকে তুলে বলে চল তো আমার সঙ্গে। মিঃ শরীফের মেয়ে বলে- কেন মা? মিঃ শরীফের স্ত্রী বলেন: বাইরে বের হব, তুইও চল আমার সঙ্গে। মিঃ শরীফের মেয়ে কথা না বাড়িয়ে অন্য সেট থ্রিপিস পরে নেয়। তারপর মিঃ শরীফের স্ত্রী বাসায় তালা দিয়ে দুজনে একসাথে বের হয়ে হাঁটতে আরম্ভ করেন। কিছুদূর যাওয়ার পর মিঃ শরীফের মেয়ে তার মাকে প্রশ্ন করল:-
: আমরা কোথায় যাচ্ছি মা?
: পার্লারে
: কেন মা?
: গেলেই বুঝতে পারবি।
মিঃ শরীফের মেয়ে চুপ করে তার মায়ের সাথে পায়ে পা মিলিয়ে হাঁটতে থাকেন। ২০ মিনিট পর তারা এলাকার নাম করা পার্লারের দরজায় হাজির হয়। দরজা ঠেলে ঢুঁ মারতেই ৩টি মহিলা কণ্ঠস্বর একসঙ্গে তাদের ভিতরে এসে বসতে বলল। ভিতরে ঢুকে মিঃ শরীফের স্ত্রী ও তার মেয়ে দেখল ৪টি চেয়ারের মধ্যে ১টি খালি পড়ে আছে আর বাকি ৩টিতেই কেউ না কেউ সার্ভিস নিচ্ছে। একজন ভ্রু প্লাক করাচ্ছে, একজন মেকআপ করাচ্ছে আরেকজন পেডিকিউর ও ম্যানিকিউর করাচ্ছে। অল্প কিছুক্ষণ পর ভ্রু প্লাক করাতে আসা মেয়েটি উঠে গেলেই মিঃ শরীফের স্ত্রী তার মেয়েকে বেঞ্চিতে বসতে বলে নিজে সেই খালি চেয়ারে গিয়ে বসলেন।

বিউটিশিয়ান ভ্রু প্লাক করা মেয়েটির থেকে পেমেন্ট বুঝে নিয়ে মিঃ শরীফের স্ত্রীকে জিজ্ঞেস করল কি করাবেন ভাবী? মিঃ শরীফের স্ত্রী জবাব দিলেন চুল ছোট করাবো। বিউটিশিয়ান জানতে চাইলো কতটুকু ছোট করাবেন? মিসেস শরীফ বললেন- একদম ছোট। ঐ ছেলেদের মত কি স্টাইল বলে যেন সেটাকে?
 বিউটিশিয়ান : পিক্সিকাট।
মিসেস  শরীফ: হ্যাঁ সেটাই
বিউটিশিয়ান : আপনি কি শিওর। আপনার চুল তো দেখছি বেশ হৃষ্টপুষ্ট। স্কাল্পে কোনো খুশকি বা চর্মরোগও দেখছি না। তবুও কেটে ফেলতে চান এতটা চুল?
মিসেস শরীফ : (গম্ভীর গলায়) হ্যাঁ।
বিউটিশিয়ান অগত্যা চুল কাটা শুরু করলো। গলায় কাপড় বাঁধল। মিসেস শরীফ দেখলেন কাপড়ে অল্পস্বল্প চুল দেখা যাচ্ছে যেগুলো প্রায় ২/২.৫ ইঞ্চি। বিউটিশিয়ান মিসেস শরীফের চুল ভালো করে আঁচড়ে নিয়ে মাথার দুপাশে দুটো ঢিলেঢালা পনিটেল বাঁধলেন। তারপর এক এক করে দুটো পনিটেল কেটে সেগুলো দোকানের কোণে একটা ঝুড়িতে ফেললেন। এরপর মিসেস শরীফের মাথার চুল পানির ছিটা দিয়ে ভিজিয়ে সামনে খানিকটা ঝুলপি রেখে মিডিয়াম বয়কাট দিলেন। ২০ মিনিটের মধ্যে চুল কাটা শেষ। মিসেস শরীফকে দেখলে এখন অল্পবয়সী কিশোর মনে হচ্ছে। মিসেস শরীফ তবুও বলেন আরেকটু ছোট করা যেত না? বিউটিশিয়ান বলেন আপনার চেহারার সঙ্গে বেমানান হবে। এবার মিসেস শরীফ দাম দিয়ে বেরিয়ে যাবেন এমন সময় মেয়ে বলে ওঠে মা আমিও চুল কাটাবো। মিসেস শরীফ না বলতে চাইলেন কিন্তু বললেন না। তিনি মাথা নেড়ে হ্যাঁ বললেন। মিসেস শরীফের মেয়েও চুল কাটাতে বসল। একই ভঙ্গিতে তার চুলের কুচিতেও কাপড় ভর্তি হলো। এভাবে চুল কাটানো শেষে মা-মেয়ে বাড়ি‌ ফিরল। রাতে মিঃ শরীফ যখন বাসার দরজায় টোকা দেবার পর মিসেস শরীফ দরজা খুলে মিঃ শরীফ তাজ্জব হয়ে গেলেন। তিনি প্রথমে ভাবলেন তিনি ভুল বাসায় ঢুকে পড়লেন কিনা কিন্তু কিছুক্ষণ মিসেস শরীফের দিকে তাকিয়ে তিনি বুঝলেন তিনি নিজের বাসাতেই ঢুকেছেন। মিঃ শরীফ এরপর ফ্রেশ হয়ে খেতে বসে মিসেস শরীফকে জিজ্ঞেস করেন “তুমি চুল কাটালে কেন?” মিসেস শরীফ বলেন, “তুমি বলেছিলে বলেই কাটিয়ে ফেললাম”। মিঃ শরীফ তার মেয়েকে আর জিজ্ঞাসা করতে সাহস করলেন না। মিঃ শরীফ এরপর খাবারে আর চুল পান না আর পেলেও বুঝতে পারেন না এটা আসলে কার চুল?

No comments:

গ্রামীণ নাপিত~আনন্দ (শেষার্ধ)

"আহা…ঠিক আছে…" তিনি বললেন যখন আমি তার বাক্সের দিকে অনুসন্ধানের দৃষ্টিতে তাকালাম তার কাছে কোন ধরনের রেজার আছে তা দেখতে। সৌভাগ্যবশত ...