রোশান ও রোশনি দুই ভাইবোন। রোশনি বড়, তার বয়স প্রায় ১৯ সে একটি গার্লস কলেজে দ্বাদশ শ্রেণিতে পড়ছে। তার ভাই রোশানের বয়স ৭ সে একটি ইংরেজি মাধ্যম স্কুলে ২য় শ্রেণিতে পড়ছে। তাদের বাবা-মা দু'জনেই চাকরিজীবী তাই তাদের তেমন সময় দিতে পারেন না। যাই হোক লোকে বলে পিঠাপিঠি ভাইবোনদের মধ্যে ঝগড়াঝাঁটি ও মারামারি বেশি হয়। কিন্তু রোশান ও রোশনির বয়সে বিরাট ব্যবধান থাকা সত্ত্বেও তাদের মধ্যেও প্রচুর ঝগড়াঝাটি, হাতাহাতি হয়। দুজন দুজনকে প্রায় সহ্যই করতে পারে না। অবশ্য এর পিছনে রোশানের দুষ্টুমির অবদানই বেশি। রোশান সবসময়ই সুযোগ খুঁজে তার বড় বোনকে বাবা-মায়ের হাতে মার খাওয়াতে। কিন্তু রোশনি তার বাবা-মায়ের একমাত্র মেয়ে হওয়ায় এবং রোশানের দুষ্টুমির মাত্রা সম্বন্ধে অবগত থাকায় তারা রোশনিকে সামান্য বকাঝকা ছাড়া অন্য শাস্তি দেন না।
একদিন রোশান তার বোন যখন বাড়িতে ছিল না তখন তার রুমে ঢুকে তার ড্রেসিং রুমে মেকআপের সামগ্রী বের করে তার রুমের দেয়ালে আঁকিবুকি করে। তারপর রোশনি কয়েকদিন আগে একটি কমিক্স বই এনে তার রুমে রাখে। রোশানের তখন পরীক্ষা থাকায় তাকে তার বোন সেটা পড়তে দেয়নি। রোশান সেটা খুঁজতে গিয়ে রোশনির পুরো রুম অগোছালো করে ফেলে। বাইরে থেকে এসে রোশনি তার রুমে ঢুকে এই অবস্থা দেখে ভীষণ খেপে যায় তাই সে তার বাবা-মায়ের রুমে গিয়ে রোশানকে খাট থেকে টেনেহিঁচড়ে তার রুমে নিয়ে এসে তার রুম গুছিয়ে দিতে বলে। রোশান রাজি হয় না তাই রোশনি তার পিঠে দুমদাম কয়েকটা কিল বসিয়ে দিলো। রোশানও পাল্টা তার বোনকে আঁচড়ে ও কামড়ে দেয় এবং সন্ধ্যানাগাদ তাদের মা ফিরে আসলে বোনের নামে মায়ের কাছে নালিশ করে। তাদের মা তাদের দুজনকেই বকুনি দিয়ে রোশানকে রোশনির রুম গুছাতে বলেন। রোশান এতে মনঃক্ষুণ্ণ হয় এবং রোশনির রুমে গিয়ে জিনিসপত্র ছোঁড়াছুঁড়ি করে। রোশনি তাদের মাকে ডেকে দেখালে তাদের মা ধৈর্য হারিয়ে রোশানের গালে চড় দেন। রোশান কাঁদতে কাঁদতে তাদের রুমে যায়। আর রোশনি নিজেই তার রুম গোছানো শুরু করে।
এর কিছুদিন পর তাদের বাবা অফিস থেকে ফেরার পথে কিছু চকলেট ও চাটনি এনে তা রোশনির হাতে দিয়ে বলেন দুই ভাইবোনে ভাগ করে খেতে। কিন্তু রোশান যেহেতু সেদিন রোশনির রুমে দুইবার গিয়ে সব তছনছ করেছিল তাই রোশানকে শাস্তি দিতে রোশনি ঠিক করে সে রোশানকে এসব চকলেট ও চাটনির ভাগ দেবে না। যাই হউক রোশান তার বাবার কাছে শুনে রোশনির কাছে তার নিজের চকলেট ও চাটনির ভাগ চায় কিন্তু রোশনি ততক্ষণে সব সাবাড় করে দিয়েছে। রোশান তার বাবার কাছে অভিযোগ দেয় কিন্তু তাদের বাবা তাকে এই বলে সান্ত্বনা দেয় যে তাকে পরে আলাদা করে চকলেট ও চাটনি কিনে এনে দিবেন। কিন্তু রোশান সন্তুষ্ট হয় না; সে রোশনির উপর বদলা নিতে চায়। সে একা তার পড়ার টেবিলে বসে আনমনে ড্রয়িং বুকে আঁকাআঁকি করতে করতে ভাবে কি করলে রোশনিকে উপযুক্ত শিক্ষা দেয়া হবে। অবশেষে তার ছোট মাথায় বুদ্ধি খেলে গেল। সে দেখেছে রোশনি তার চুলের পিছনে বেশ সময় ব্যয় করে। সে ঠিক করে সে রোশনির চুল কেটে দিবে। দুষ্ট হাসি হেসে সে তার মায়ের ড্রেসিং রুমের ড্রয়ার থেকে বড় একটা কাঁচি বের করে। তারপর সে কাঁচিটা তার ও তার বাবা-মায়ের শোবার ঘরে খাটের তলায় লুকিয়ে রাখল। দিনের বেলায় কোনভাবেই রোশনির চুল কাটা সম্ভব নয় তাই সে রাতে যখন সবাই ঘুমাবে তখন চুপিচুপি রোশনির চুল কেটে আসবে ঠিক করে। যেই ভাবা সেই কাজ, রাতে সবাই খেয়ে যার যার ঘরে ঘুমোতে গেল। রোশনি আধাঘণ্টা পড়ার টেবিলে বসে বাতি নিভিয়ে শুয়ে পড়ল।
রোশনির ঘুম হয় খুব গভীর। আরো আধাঘণ্টা পর যখন রোশান নিশ্চিত হয় যে তার বাবা-মাও ঘুমে আচ্ছন্ন তখন সে তাদের মাঝখানে থেকে উঠে সন্তর্পনে খাট থেকে নেমে খাটের তলা থেকে কাঁচিটা বের করে আস্তে করে দরজা খুলে রোশনির রুমের সামনে যায়। রোশনির রুমের দরজা খোলাই ছিল। সে যখন ঢুকতে যায় তখন রোশনি হঠাৎ পাশ ফিরে শোয়ায় রোশান ভয় পেয়ে দরজার সামনে থেকে সরে আসে। পরে উঁকি দিয়ে গুটিগুটি পায়ে রোশনির খাটে এসে বসে পড়ে। রোশনির চুল পাতলা, স্ট্রেইট করা ও বেশ সিল্কি এবং পিঠের মধ্যভাগের খানিকটা ওপর পর্যন্ত দীর্ঘ। রোশান ৫ মিনিট অপেক্ষা করে রোশনি ঘুমিয়েছে কিনা তা নিশ্চিত করে তারপর রোশনির কিছু চুল আলগা করে মুঠি করল তারপর তাতে কাঁচি চালালো। সে কয়েকবার এরকম করে তারপর নিজেদের ঘরে গিয়ে দরজা আটকে কাঁচিটা লুকিয়ে বাবা-মায়ের মাঝে শুয়ে ঘুমিয়ে পড়ল।
সকালবেলা তার ঘুম ভাঙ্গে রোশনির চিৎকারে। ঘুম থেকে উঠেই রোশনি এসে তার বাবা-মায়ের দরজায় জোরে কড়া নাড়ে আর চিৎকার করে বলে রোশানকে আজ আমি মেরেই ফেলব। তাদের বাবা-মা লাফিয়ে ঘুম থেকে উঠে দরজা খুলে দেখে রোশনি তার হাতে একগাছি চুল নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে; রোশনির মাথার চুল এলোমেলো করে কাটা। সে ঢুকেই রোশানের দিকে তেড়ে যেতে লাগল কিন্তু তাদের বাবা-মা তাকে নিরস্ত করল। প্রত্যেকেই বুঝতে পারে যে কাজটা রোশানই করেছে কারণ তার পায়ে রোশনির চুল লেপ্টে ছিল। রোশানও ততক্ষণে ঘুম থেকে উঠে গেছে কিন্তু তার আনন্দের জায়গায় ভয় লাগছে। অতঃপর তাদের বাবা-মা রোশনিকে শান্ত করে হাত-মুখ ধুয়ে নাস্তা সেরে তৈরি হতে বললেন।
সকলে হাত-মুখ ধুয়ে নাস্তা খেলেন তারপর রোশনিদের মা তাদের ২ ভাইবোনকে নিয়ে গাড়িতে করে পরিচিত পার্লার অভিমুখে যাত্রা করলেন। পার্লারের মালকিন রোশনির চুলের অবস্থা দেখে সে সম্পর্কে জানতে চাইলে তাদের মা সব খুলে বলেন। মালকিন হেসে রোশানের গাল টেনে দিয়ে তাদের ৫ মিনিট বসতে বলেন। ৫ মিনিট পর একটা চেয়ার খালি হলে রোশনি সেখানে বসে। রোশনির মা বিউটিশিয়ানকে বয়কাট দিতে বলেন কিন্তু বয়কাট রোশনির মুখের গড়ন আর চুলের পুরুত্বের সঙ্গে মানানসই হবে না বলে বিউটিশিয়ান চিনলেংথ ববকাট দিলে ভালো হবে বলে জানান। অতঃপর রোশনির গলায় কেপ বেঁধে প্রথমে তার চুল শ্যাম্পু করা হয়। এরপর মাথা ধুয়ে তার অসমান চুল কেটে সমান করে দেন। তারপর কপালের সামনে কিছু ঝুলানো চুল (Bangs) রেখে কাটা শেষ করেন। তারপর তার মা ও বসেন চুল কিছুটা ট্রিম করাতে। সবশেষে বিউটিশিয়ানদের পারিশ্রমিক দিয়ে রোশনি-রোশান ও তাদের মা গাড়ি করে বাড়ি ফিরে আসেন। রোশান অবশেষে বুঝল তার শোধ নেওয়াটা খুব বেশি কার্যকরী হয় নাই।
No comments:
Post a Comment