Thursday, August 27, 2015

নাপিতের দোকানে ফুপি

গত গ্রীষ্মকাল সাম্প্রতিক বছরগুলোর মধ্যে সর্বাপেক্ষা উষ্ণতম গ্রীষ্মের একটি ছিল, গড় তাপমাত্রা প্রায় ৪০° এর কাছাকাছি ছিল। আবহাওয়া খুবই রুক্ষ ও শুষ্ক ছিল, মানুষ সর্বক্ষণ ঘেমে নেয়ে একাকার হয়ে ছিল। এমন সময় সাহিরের ভার্সিটির ছুটি পড়ল। এই সুযোগে সে আত্মীয় স্বজনের বাড়ি ঘুরে আসবে ঠিক করল। প্রথমেই সে ভার্সিটির কাছাকাছি মফস্বলে তার ফুফুর বাড়িতে যাবার সিদ্ধান্ত নিল। সাহিরের ফুফা-ফুফু বেশ ধনশালী। ৪ তলা বাড়ির একদম উপরের তলায় ফুফা-ফুফু থাকেন বাকি তিনতলা ভাড়া দেওয়া। সাহিরের ফুফা একমাস পর পর ভারতে যান তার ব্যবসা দেখভাল করতে। ফুফুর একটাই মেয়ে সে সাহিরের এক চাচার বাড়িতে থেকে পড়াশুনা করে। সাহিরের ফুফুর বয়স ৩৬ বছর; তার মাথায় এখন অবধি পুরু ও ঝলমলে লম্বা কালো চুল শোভা পায়। গৃহিণী হবার সুবাদে তিনি তার চুলের ভালো যত্ন নিতে পেরেছিলেন ফলে তা তার কোমর পর্যন্ত বাড়তে পেরেছে। আশৈশব তার দীর্ঘ চুল ছিল, তিনি প্রায় হাঁটু পর্যন্ত চুল বাড়িয়েছিলেন কিন্তু কয়েকবছর অন্তর তা পিঠের মাঝ পর্যন্ত কাটিয়ে নেন। তারপর আবার বাড়তে দেন এবং শেষ পর্যন্ত তা এখন মেরুদণ্ডের শেষাংশ ছাড়িয়েছে।

ফুফু বিভিন্ন ক্লিপ, ব্যান্ড ও ফিতা ব্যবহার করে চুলগুলোকে খোঁপা বানিয়ে বিভিন্ন স্টাইল করে চুল বাঁধতেন। তিনি চুল হারানোর মুডে ছিলেন না। কিন্তু ফুফুদের ঘরের এয়ার কন্ডিশনারটি বিকল হলে পরিস্থিতি খারাপ হয়। এটা ছিল চরম অসহনীয়। কাস্টমার কেয়ার এটি মেরামতের জন্য এক সপ্তাহ চেয়েছিল। ব্যাপারটা খুব বাজে হলো। আর নেওয়া যাচ্ছিল না। এরই মধ্যে তাপমাত্রা গত কুড়ি বছরের সর্বোচ্চ তাপমাত্রার রেকর্ড ভেঙে ফেলল। দিকে দিকে বাচ্চাদের মাথা কামিয়ে ফেলার ধুম পড়ল; মেয়েগুলোও গরমে নিজেদের ঝক্কি কমাতে চুলের কিছু অংশ কাটাচ্ছিল। গরমে এসি ছাড়া বাড়িতে টেকা দায় তাই সাহির দিনের বেশিরভাগ সময় বন্ধুর বাড়িতে কাটানো শুরু করে। সাহিরের ফুফা এখনও দেশে আসেননি। ফুফু শুধু একা ঘরে থাকেন। এখন তিনি চুল নিয়ে সংগ্রাম করছেন। একদিন সাহির তাকে জিজ্ঞাসা করল "ফুপি, এমন গরমে এত দীর্ঘ চুল কি সমস্যা নয়?" তিনি বেশ স্বতঃস্ফূর্তভাবে জবাব দিলেন, ‘হ্যাঁ, তবে আমি মানিয়ে নিচ্ছি’। সাহির বলে, ‘এখন কাঠফাটা রোদ পড়ছে, কেন তুমি তোমার চুল কাটাও না?' যখনই ফুপি ‘চুল কাটা’ শব্দটি শুনেন তখনই তিনি নার্ভাস হয়ে যান। তিনি মিনমিন করে বললেন, 'আমি কিছুদিন পরেই কাটাবার পরিকল্পনা করছি’ সেই একই উত্তর সাহির যখন সেই ছোটবেলা প্রথম তাকে চুল কাটার জন্য বলে ঠিক তখন থেকেই শুনে আসছে। তবে ফুফু কখনো চুল একেবারে কাটায় না। সাহির জোর দিয়ে বলল, ‘‘ফুপি, তোমার দেরি না করে আজই চুল কাটা উচিত" ফুপি এবার এমন উত্তর দিলেন যা শুনবে বলে সে ভাবতে পারেনি। “হ্যাঁ আমি এখন এটা থেকে মুক্তি পেতে চাই, এটা আমার সহ্যসীমার বাইরে।" সাহির মনে মনে বলল, যাক ফুপি শেষতক বুঝতে পেরেছে যে এই গ্রীষ্মে তার লম্বা চুল আসলেই একটি সমস্যা। ফুপি বলে যান, 'তবে এই কদিনে পার্লারগুলোতে যা উপচে পড়া ভিড়, আর এলাকায় পার্লার মাত্র ৪টি এর মধ্যে ৩টিই ছোট ছোট। যাতে এমনিতেই সিরিয়াল পড়ে থাকে।

সাহির পরামর্শ দিলো, আচ্ছা নাপিতের দোকানে গেলে কেমন হয়? তিনি এখন নার্ভাস হয়ে উঠলেন। বললেন: ‘‘নাপিতের দোকান! না না ছেড়ে দাও" সাহির গোঁ ধরে বলল, তুমি যদি আজ নাপিতের কাছে না চলো তাহলে আমিই তোমার চুল এলোপাতাড়িভাবে কেটে দেব; তুমি নিজেই স্বীকার করলে যে তোমার চুল সামলাতে এখন মুশকিল হচ্ছে। তিনি এক মিনিট চুপ করে রইলেন এবং বললেন: ঠিক আছে চল তবে। সাহিরের পরামর্শে তিনি তার মেছকি খুলে সালোয়ার-কামিজ পরে তৈরি হয়ে নিলেন। ১৫ মিনিট পরে তিনি ফিরে এলেন, মাথার চুলের বেণীটি এখনো অক্ষত। সাহির আর তার ফুপি বেরিয়ে পড়লেন। যেতে যেতে তারা দেখলেন মহল্লার ২টি পার্লারের সামনেই কিশোরী,যুবতী এবং বাচ্চাদের হাত ধরে দাঁড়ানো মহিলাদের ভিড়। তারপর তারা একটি চুল কাটার দোকানে হাজির হলেন কিন্তু তার সামনে রাখা টুলেও ২টি ছোট ছেলে ও একটি লোক তার শিশুকন্যাকে কোলে নিয়ে বসেছিলেন। ভেতরে চারটি চেয়ারে ২ জন যুবক ও বাকি দুটির একটিতে একজন মাঝবয়সী লোক এবং অপরটিতে একটি ছোট মেয়ের চুল কামানো হচ্ছে। ফুপি বললেন, “এটিতে খুব ভিড় মতো, আমার চুল কাটার দরকার নেই।'’ সাহির তাকে বলল যে সামনে চলো ওখানে খালি থাকবে নিশ্চিত। এরপর তারা খালি বাজারের মাঝ দিয়ে হেঁটে বাজারের অপর প্রান্ত দিয়ে বেরিয়ে আসে। তারপর বাঁয়ে মোড় নিয়ে অন্য নাপিতের দোকানে পৌঁছে। 


এটি একটি পুরনো নাপিতের দোকান ছিল, তবে ভিড় বেশ কম ছিল। দুটি চেয়ার ছিল, দুটিই দখলে ছিল। একটায় মুরুব্বীগোছের মাথায় টাক পড়া এক ব্যক্তির মাথার পিছনের চুল ছাঁটাচ্ছিলেন অন্যটিতে একটা বাচ্চা মাথা কামাচ্ছিল। সাহির তার ফুপিকে দোকানের সামনে রাখা ওয়েটিং বেঞ্চে বসতে বলে। এবার সে প্রথম নাপিতকে জিজ্ঞাসা করল, "আপনার শেষ করতে কত সময় লাগবে?" তিনি জবাব দিলেন, পরের সিরিয়াল আপনারই। সাহির তাকে বলে, আমার ফুপি চুল কাটাবেন, আমি না। তিনি মৃদু হাসলেন এবং বললেন, পার্লারের সিরিয়াল ভর্তি! সাহির হ্যাঁ-সূচক মাথা নাড়ল। মুরুব্বী উঠবার সাথে সাথে ফুপিকে খালি চেয়ারে বসানো হল এবং গলার নিচ থেকে তাকে একটি কিছুটা ময়লা কণা কণা চুল ভর্তি কাপড় দিয়ে ঢেকে ফেলা হল। তার বেণী কাপড়ের তলা থেকে টেনে বের করা হল এবং চেয়ারের পিছনে ফেলে দেওয়া হল। তার মোটা বিনুনি এখন চেয়ারের পিছনে ঝুলছে। নাপিত সাহিরকে জিজ্ঞাসা করলেন, কি করব? ও নাপিতকে বলল, ছোট করুন। তারপর ফুপির দিকে তাকাতে ফুপি তাড়াতাড়ি বললেন। আমার ববকাট চাই। নাপিত তাকে জিজ্ঞাসা করতে লাগলেন, "লং বব বা শর্ট?" সাহির বাধা দিয়ে বলল “ফুপি এই গরমে চুল একদম ছোট করতে হবে। না হলে কিন্তু চুল কাটার পয়সা মাটি হবে। আংকেল, একদম ছেলেদের মত করে কেটে দেন। ফুপি প্রথমে সংকোচ বোধ করছিল কিন্তু কিছুক্ষণ ভেবে মাথা নেড়ে সায় দিল।

নাপিত চেয়ারের পাশের একটি ড্রয়ার থেকে বড় একটা কাঁচি নিয়েছিল। এটিকে কাঁধের কাছাকাছি একটু নিচে ধরলেন এবং বাম হাতে বিনুনিটি টানটান করে ধরে কাটলেন। ছিক ছিক শব্দে বেণীটি কাটা পড়ল। ফুপি তার সাধের সবুজ ফিতা দিয়ে বাঁধা বেণীটি কাটা পড়ার সেই লোমহর্ষক দৃশ্যটি দেখবার চেষ্টা করছিল কিন্তু নিজের চেহারার জন্যই দেখতে পেল না। সাহির কিন্তু খুব ভাল করেই দেখতে পেয়েছে। প্রতিটি চিরুনির আঁচড় ও প্রতিটি কাঁচির সজোরে ছিক ছিক শব্দে চুলের বিচ্ছিন্ন হওয়া। বিনুনি ততক্ষণে নাপিতের হাতে ছিল এবং সে তা ফুপির সামনে আয়নার নিচে রাখল। তারপরে তিনি কাটা অংশে একটি হাতলওয়ালা মোটা দাঁতের চিরুনি ঢুকিয়ে নিচ বরাবর চালালেন তার কাটা চুলগুলি খুলতে। তারপরে তিনি চুল কাটার জন্য ব্যবহৃত চিরুনি দিয়ে সমস্ত চুল পিছন দিকে আঁচড়ান। নাপিত তারপরে চুলগুলি চার ভাগে বিভক্ত করে তার মুখ সহ চারদিকে ছড়িয়ে দেয়। তারপরে তিনি একটি ক্লিপার বের করে গার্ডটা সামান্য উঠিয়ে মাথা নিচু করে পিছনে ঢুকিয়ে দেন চুলের খণ্ড মেঝেতে পড়তে লাগল। তারপরে তিনি একটি কাঁচি নিয়ে একটি সীমা চিহ্নিত করলেন। 

ফুপির চুলগুলি তারপর স্প্রেয়ার দিয়ে ভেজানো হলো। তারপরে তিনি চুলগুলি তার মাথার সামনের দিকে আঁচড়ে দিয়ে বাম দিকে পাট করে সামনে রাখলেন। তারপরে তিনি চুলের ডান অংশটি ডান পাশে আঁচড়ালেন ও তার কানের উপরিভাগ বরাবর দৈর্ঘ্যে কাঁচি দিয়ে কাটতে থাকেন। তারপরে তিনি তার মাথাটি বামে হেলিয়ে কাঁচি দিয়ে ডান দিকের লম্বা চুল যেগুলো বেণীতে বাঁধা না পড়ায় কাটা যায়নি সেগুলো ছোট করে কাটলেন। ফুপির গলায় বাঁধা কাপড়টি এখন ভেজা চুলের দলায় ঢেকে গেল। বাঁদিকটা বাদে ফুপির মাথার সমস্ত চুল এখন ছোট। তারপরে তিনি ফুপির মাথাটি বিপরীত দিকে হেলিয়ে দিয়ে চুল কাটা শুরু করলেন। তিনি খুব দ্রুত কাটছিলেন, কাঁচির ছিক ছিক আওয়াজ হচ্ছিল এবং চিরুনি দিয়ে কাটা চুল সরাচ্ছিলেন এবং পুনরায় বাকি চুল কাটছিলেন। ফুপির কোল এখন চুলে পরিপূর্ণ হল। তিনি দুপাশে এক লেভেল করতে ডানদিকে আরও খানিকটা ছেঁটে দিলেন। 

নাপিত তার কানের সামনে, পিছনে এবং ঘাড় ভিজিয়ে দেয়। তারপরে ক্ষুর হাতে নিয়ে ব্লেড বদলে সাহিরকে জিজ্ঞাসা করল, '‘আবছা পাতলা চুলগুলি কামিয়ে দিচ্ছি'’ সাহির মাথা নেড়ে হ্যাঁ বলে। নাপিত তারপর দুই কানের সামনে কামালো ও কানের পিছনে রাউন্ড শেপে কামালেন। এরপর ঘাড়ের যেখানে হালকা চুলের রেখা দেখা যায় সেখানে ক্ষুর বসিয়ে পুরো ঘাড় কামিয়ে দিল। নাপিত তারপর আয়নার সামনে ক্ষুরটি রেখে দেয়। অতঃপর নাপিত একটি স্পঞ্জ নিয়ে তার ঘাড়ে ও কানের কাছে কিছু পাউডার লাগালেন। তারপরে তিনি সাবধানে গলায় বাঁধা কাপড়টি খুললেন এবং স্পঞ্জ দিয়ে তার মুখে লেগে থাকা চুল পরিষ্কার করলেন। অতঃপর চুলগুলি চিরুনি দিয়ে ভালোমত আঁচড়ান এবং চেয়ারটি ঘুরিয়ে দেন যাতে সাহিরের ফুপি উঠতে পারেন। ফুপি উঠে তার ঘাড়ে হাত দিয়ে পেছনের খোঁচা খোঁচা চুল অনুভব করতে লাগল। সাহির নাপিতকে টাকা দিয়ে তার সাথে বাড়িতে চলল। বাসায় এসে ফুপি গোসল সেরে শাড়ি পরল। শাড়ির সাথে বয়কাটে ফুপিকে খুব মিষ্টি লাগছিল। পরে ফুপি সাহিরকে কত টাকা লেগেছিল তা জানতে জিজ্ঞাসা করলেন, "আচ্ছা আমার চুল কাটাতে কত লেগেছিল?" সাহির জবাব দিল, "বেশি না মাত্র ৳৩০?" ফুপি হেসে বললেন, "এত সস্তা! তারপরে সাহিরকে ধন্যবাদ দিয়ে বললেন: তোমার কথা মত চুল কাটিয়ে বেশ হয়েছে। এখন বেশ ফুরফুরে আর চনমনে লাগছে। সকালবেলার থেকে গরম কম লাগছে। 



No comments:

গ্রামীণ নাপিত~আনন্দ (শেষার্ধ)

"আহা…ঠিক আছে…" তিনি বললেন যখন আমি তার বাক্সের দিকে অনুসন্ধানের দৃষ্টিতে তাকালাম তার কাছে কোন ধরনের রেজার আছে তা দেখতে। সৌভাগ্যবশত ...